“আদর্শের জায়গা থেকে রাজনীতিটা করতে চাই। সবার কাছ থেকে সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই”, প্রতিক্রিয়ায় বললেন জাহাঙ্গীর আলম।
Published : 21 Oct 2023, 07:22 PM
‘ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে’ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ আবার তুলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তাকে ‘ক্ষমা করল’ ক্ষমতাসীন দল।
গত জানুয়ারিতেও একই শর্তে দলে ফেরানোর চার মাসের মাথায় ‘বিদ্রোহী’ নেতাকে ‘স্থায়ী বহিষ্কার’ করার কথা জানানো হয় দলের পক্ষ থেকে।
আগের বার ১৩ মাস দলের বাইরে ছিলেন তিনি। এবার পাঁচ মাসেই শেষ হলো ‘স্থায়ী বহিষ্কার’।
শনিবার আওয়ামী লীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে ক্ষমাপ্রার্থীদের প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্ৰীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। সেই সূত্রে আপনার প্রতিও ক্ষমা প্রদর্শন করা হল।"
জাহাঙ্গীরকে এক আগেও বহিষ্কার করার কথা জানিয়ে একই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে, তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।”
এই আদেশের বিষয়ে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তার (জাহাঙ্গীর) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চিঠির বাইরে আমার কোনো বক্তব্য নেই।”
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো বিদ্রোহ করে বহিষ্কার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর অবশ্য দলে ফেরার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
গত ১৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মেয়র হিসেবে তার মা জায়েদা খাতুনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মুজিব কোট গায়ে তিনিও ছিলেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবার তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।’
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি পেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যত বিপদই হোক, তা কাটিয়ে উঠা যায়। আমি অভিনন্দন জানিয়েছি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গাজীপুরের জনগণ ও দেশবাসীকে। আদর্শের জায়গা থেকে রাজনীতিটা করতে চাই। সবার কাছ থেকে সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই।”
দলের শৃঙ্খলা ‘বারবার ভঙ্গ’
জাহাঙ্গীর আলম ছাত্রলীগ করে উঠে এসেছেন। তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে।
প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র পদে সমর্থন দিয়েছিল আজমত উল্লা খানকে। সে সময়ের তরুণ নেতা, ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
দলের নির্দেশেও ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি না হওয়ার পর ‘নিখোঁজ’ হন তিনি। পরে ভোটের আগে আগে গাজীপুরে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে আজমতকে সমর্থন জানান। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যালটে তার নাম থেকে যায়।
গাজীপুরে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও সেই নির্বাচনে আজমত হারেন এক লাখ ৬ হাজার ৫৭৭ ভোটে। জাহাঙ্গীরের সমর্থক নেতা-কর্মীদের তখন আজমতের পক্ষে নামতে দেখা যায়নি। এটা তখন নৌকার পরাজয়ে ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভোটের পরে জাহাঙ্গীর তখন বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাইয়ে ‘ভুল’ করেছে।
২০১৮ সালে জাহাঙ্গীর নৌকা পেয়ে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে হারিয়ে দেন ২ লাখ দুই হাজার ৩৯৯ ভোটে। মেয়র হওয়ার পর থেকে রাজধানী লাগোয়া এই জনপদে তার প্রভাব ক্রমেই বাড়ছিল।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এরপর আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ১৯ নভেম্বর দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। পরে তিনি হারান মেয়রের পদ। মেয়াদ শেষে উচ্চ আদালত এক রায়ে অবশ্য বলে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত বৈধ ছিল না।
১৩ মাসের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর চলতি বছরের জানুয়ারিতেই দলে ফিরেন জাহাঙ্গীর। ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থি কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।
সেই ‘ক্ষমা’র শর্ত ভঙ্গ করে চার মাস যেতে না যেতেই দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বসেন জাহাঙ্গীর। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘তাকে গুম করাও হতে পারে।’
মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তা টেকা নিয়ে সংশয় ছিল জাহাঙ্গীরের। যে কারণে মা জায়েদা খাতুনের নামে জমা দেন আরও একটি মনোনয়নপত্র।
একটি পোশাক কারখানার শত কোটি টাকার খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর মা জায়েদা খাতুনের নির্বাচনে আঁটঘাঁট বেঁধে নামেন তিনি।
প্রচার চলাকালে ১৫ মে জাহাঙ্গীরকে স্থায়ী বহিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি দেয় আওয়ামী লীগ। ২৫ মের ভোটে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ জায়েদা খাতুনের ‘বিস্ময়কর’ জয়ের পেছনে জাহাঙ্গীরের ভূমিকাই সামনে আসে।
তবে ভোট শেষে ২৮ মে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে মাকে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, “আমি জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ। এটা কেউ মানুক আর না মানুক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমার মাও জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ। আমরা মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে এসেছি, নেত্রীর বাড়িতে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা সহযোগিতা চাই।”