Published : 10 Jul 2023, 04:35 PM
আগামী বুধবার ঢাকায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যে সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, সেদিন থেকে আন্দোলনের ‘নতুন যাত্রা’র ঘোষণা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব আবারও বলেছেন, “একতরফা নির্বাচন আর করতে দেওয়া হবে না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অসুস্থ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও রফিকুল ইসলাম মিয়ার আরোগ্য কামনায় সোমবার সকালে নয়াপল্টনে দোয়া পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ফখরুল এ কথা বলেন।
মাথায় টিউমার নিয়ে খন্দকার মোশাররফ সিঙ্গাপুরে ন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি হসপিটালে আর রফিকুল তার বাসায় চিকিৎসাধীন।
বুধবার সরকার পরিবর্তনে চলমান আন্দেোলনের ‘চূড়ান্ত পর্যায়ের কর্মসূচি’ ঘোষণা করা হবে জানিয়ে করে ফখরুল বলেন, “আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব (তারেক রহমান) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং আমাদের যে যুগপৎ আন্দোলন হচ্ছে সেই আন্দোলনে সম্পৃক্ত সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো, জোটগুলো আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী ১২ তারিখে (বুধবার) আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের নতুন গণতন্ত্রের জন্যে যে যাত্রা, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যে নতুন যে আ্ন্দোলনের যাত্রা তার ঘোষণা আমরা দেব।”
বিএনপি বাধ্য হয়ে আন্দোলন করছে, এমন দাবি করে তিনি বলেন “আমরা তো নির্বাচন করেই এ পরিবর্তন চাই। কিন্তু নির্বাচন তো আপনি করতে দিচ্ছেন না। নির্বাচন আপনি নিজে নিজে করে নিয়ে চলে যাচ্ছেন আপনারা মত করে। সেই ব্যবস্থা তো চলতে পারে না।
‘‘আমরা বার বার করে বলছি, আবারও বলছি, শান্তিপূর্ণভাবে বলছি, দেশটাকে বাঁচানোর জন্য এখনো সময় আছে। আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। জনগণের যে দাবি, একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য পদত্যাগ করে একটা নির্বাচন দিন। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংকট দূর হবে বলে আমরা মনে করি, দেশের মানুষও বিশ্বাস করে।”
নেতাদের অসুস্থতা ‘নির্যাতন-নিপীড়নে’
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতার অসুস্থতার জন্য সরকারকে দায়ী করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘নির্যাতন-নিপীড়নই’ এর কারণ।
খন্দকার মোশাররফ ও রফিকুল ইসলাম মিয়া ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও এখন অসুস্থ।
“কেন আজকে আমাদের নেতৃবৃন্দ এ রকম অসুস্থ হচ্ছেন”- এই প্রশ্ন রেখে ফখরুল ‘নিপীড়ন-নির্যাতন’ এর কথা বলে তাদের নেত্রীকে কারাগার বন্দি রাখার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাকে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) নিজে বলেছেন … তাকে যখন পুরনো সেন্ট্রাল কারাগারে রাখা হয়েছিল, আমরা পরে যখন কারাগারে গেলাম, কারাগারের লোকজনের কাছে আমরা শুনলাম একটা স্যাঁতস্যাঁতে পুরনো ঘর, দেয়াল দিয়ে পানি পড়ছে, ইঁদুর দৌঁড়াচ্ছে … সেখানে এই মহান নেত্রীকেও রাখা হয়েছে। তার চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
“এই অবৈধ নিপীড়নকারী, নির্যাতনকারী শেখ হাসিনার সরকার… তারা অত্যন্ত সচেতনভাবে গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে অসুস্থ করেছে, যারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে যে রাজনৈতিক দলগুলো, তাদেরকে হত্যা করেছে, অসুস্থ করেছে। সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি তারা করেছে গোটা জাতিকে অসুস্থ করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে তারা একটা অসুস্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।”
শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন,
“আমরা আজকে অনেকেই অসুস্থ। তারপরে কিন্তু কেউ থেমে নেই। আমরা কাজ করছি, সংগ্রাম করছি, মানুষের কাছে যাচ্ছি।
“লক্ষ্য একটাই আমাদেরকে এই অসুস্থ রাষ্ট্রকে সুস্থ করা এবং জাতিকে এই অসুস্থতার হাত থেকে মুক্ত করা। আসুন আমরা আল্লাহতালার কাছে দোয়া চাই তিনি যেন আমাদেরকে কামিয়াব করেন, সফল করেন।”
‘দয়া চাইনি, চেয়েছি ন্যায়বিচার’
২০২০ সালের ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য তাকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া এবং এরপর আরও পাঁচ দফা মুক্তির মেয়ার বাড়ানোর প্রসঙ্গও উঠে আসে ফখরুলের বক্তব্যে।
বিএনপি যখন আদালতে গিয়ে তার নেত্রীকে জামিনে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়, তখন তার পরিবারের অনুরোধ শেখ হাসিনা এই আদেশ দেন।
এরপর থেকে আওয়ামী লীগের নেতারা নানা সময় বিএনপি নেত্রীকে ‘করুণা’ করার কথা বলেছেন।
ফখরুল বলেন, “বহুবার দেন-দরবার করে …ডাক্তারররা প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন যে, দ্রুত তার চিকিৎসা দরকার। তার চিকিৎসা ‘করে নাই’। যখন করোনা শুরু হয়ে গেল, তখন তাকে বাসায় পাঠাচ্ছে। আবার উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন কি, ‘আমি করুনা করেছি।’ তার দয়ায় নাকি …।”
“আমরা তো দয়া চাইনি। জাস্টিস চেয়েছি, ‘ন্যায়বিচার’ চেয়েছি।”
‘করুণা করার’ কিছু নেই, এমন বিষয়ের প্রতি ইংগিত করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘এখানে আমরা কোনো রাজত্বে বাস করি না। রাজা-রানির রাজত্বে বাস করি না। আমরা মনে করি, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় সেই মিলাদে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, আবদুল খায়ের ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু, মোস্তাক মিয়া, হারুনুর রশীদ, আবদুল খালেকসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।