বিএনপি নেতা বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা হয়। এ দেশের মানুষ এসবে বিশ্বাস করে না।”
Published : 21 Oct 2023, 11:37 PM
বিএনপি কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন।
বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীর জন্য নয় জানিয়ে তিনি বলেছেন, এখানে সবার অধিকার সমান। সংখ্যায় কম বেশি বলতে কিছু নেই।
শনিবার দুর্গা পূজার সপ্তমীতে ঢাকার ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এসব কথা বলেন এই বিএনপি নেতা।
ঠাকুরগাওয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিজের বড় হওয়া ও তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “দুর্গা পূজা বলেন, ঈদের কথা বলেন অথবা রমজানের কথা বলেন, যারা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাদের উৎসবের কথা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার, রাষ্ট্র সবার।”
ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের বিভেদ বা সংঘাত দেখতে চান না ফখরুল। তিনি বলেন, “আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব এই দেশে ধর্মকে নিয়ে কোনো রকমের বাড়াবাড়ি কেউ যেন না করে। ধর্মকে নিয়ে যেন কোনো সংঘাত না হয়, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি না হয়।
“আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র যদি থাকে সেখানে সকলের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব, এই সংঘাত সৃষ্টি হয় না।”
বিএনপির দর্শনের ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের’ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সব সময় বলেন যে, ‘আমি সংখ্যালঘু কথাটিতে বিশ্বাস করি না, আমি বিশ্বাস করি এ দেশে যারা আছেন, সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের পরিচয় একটা তারা বাংলাদেশি।’
“আপনার সংখ্যায় কম হতে পারেন, কিন্তু অধিকার সবার সমান।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি কেবল অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না,… অন্যান্য ধর্মের যে অধিকার, সেই অধিকার রক্ষা করার জন্য আমরা চেষ্টা করি।
“তার প্রমাণ এই মণ্ডপ, এই উপাসনালয়। আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকার কথা, সাদেক হোসেন খোকা সাহেব যখন এই ঢাকার মেয়র ছিলেন, তিনি প্রথম এই জমি উদ্ধারের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
“রমনা কালী মন্দির ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, সেই মন্দিরের জমি আমাদের সরকার উদ্ধার করে মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল।”
‘বিভক্তি নয়, ঐক্যের রাজনীতি চাই’
দেশকে বিভক্ত করে ফেলা অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, “এই বিভক্তির রাজনীতি আমরা চাই না, আমরা ঐক্যের রাজনীতি চাই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মুক্তি হলে সেখানে মানুষের মুক্তি সম্ভব হবে।”
হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলে এই দুর্গোৎসব উদযাপনের কথাও তুলে ধরেন বিএনপি নেতা। বলেন, “বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা হয়। এ দেশের মানুষ এসবে বিশ্বাস করে না।
“বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম সবাই এক সঙ্গে তারা যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে এবং দেশ স্বাধীন করেছে।
“স্বাধীনতার সময়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল, একটি ধর্ম নয়, বর্ণ নয়, কোনো সম্প্রদায় নয়, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশকে নির্মাণ করা।“
বিএনপির আন্দোলনের কথাও তুলে ধরেন ফখরুল। তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করছি। এখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সবার অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে, সব মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।”
স্বাধীনতার স্বপ্ন ও আশা ‘ধূলায় মিশে গেছে’ অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, “গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে, ভোটের অধিকারের জন্য মানুষকে লড়াই করতে হচ্ছে।”
ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপে পৌঁছালে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মনিন্দ্র কুমার রায়, পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্র নাথ পোদ্দারসহ নেতারা বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ধর্ম বিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু অপু, যুব দলের কামাল আনোয়ার আহমেদও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে রাতে বিএনপি মহাসচিব বনানী মাঠে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে পূণ্যার্থীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।