সংকট তারা বানিয়েছে, সমাধানের দায়িত্বও তাদের: ফখরুল

‘সময় হলেই’ বিএনপি ‘নির্দলীয় সরকারের ফর্মুলা’ দেবে, বলেছেন দলের মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2022, 12:43 PM
Updated : 28 Sept 2022, 12:43 PM

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনে ক্ষমতাসীনদেরই উদ্যোগ নিতে বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

‘আমরা কার কাছে পদত্যাগ করব’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “উনারা, নিরপেক্ষ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে, তাদের কাছে পদত্যাগ করবেন।”

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি এখন বিলুপ্ত হওয়ায় সেক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সেই সংবিধান সংশোধনে তাদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ ক্রাইসিসটা তারা ক্রিয়েট করেছে এবং দায়িত্বটাও তাদের।

“জনগণের দাবি যেহেতু এটা, জনগণের এই দাবি মেনে নিয়ে তাদেরকে অবশ্যই সেই উদ্যোগ গ্রহণ করে…যেমন আমরা করেছিলাম, ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পার্লামেন্টে পাস করে সংশোধন করেছিলাম। সেই একইভাবে করা যেতে পারে।”

ফখরুল বলেন, “এটা আমি আমার কথা বলছি, এটা আমার পার্টির সিদ্ধান্ত নয়। আমরা এখনও এই ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি। কিন্তু এটাই হচ্ছে পদত্যাগের একমাত্র পথ।”

‘সময় হলেই’ বিএনপি ‘নির্দলীয় সরকারের ফর্মুলা’ দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা তো আমাদের যখন সময় আসবে, তখন সেই (নির্দলীয় সরকার) ফর্মুলা আমরা দিয়ে দেব অবশ্যই। শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখাও দেওয়া হবে।”

‘আন্দোলন দমাতেই সরকার হত্যা নির্যাতনের পথ খুঁজছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, “গত ১০ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত নুরে আলম, আব্দুর রহিম, শাওন, শহীদুল ইসলাম শাওন ও আব্দুল আলিম, এই পাঁচজন নিহত হয়েছে। তার মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ ৪ জনকে গুলি করে এবং একজনকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। ২ হাজার ৭৬৮ জনের বেশি আহত হয়েছে, ২৯৪ জন কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন।

“প্রায় ৭৫টি মিথ্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ৫ হাজার ৪৭০ জনসহ ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে চলমান আন্দোলন দমন করতেই এই অনির্বাচিত সরকার হত্যা,পুলিশি নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিচ্ছে।”

‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি উদ্বেগজনক’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে প্রাথমিক শিক্ষকদের করণীয় বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তির নিন্দা জানিয়ে ফখরুল বলেন, “এই সার্কুলারে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এই সরকার যে কর্তৃত্ববাদী সরকার, আমরা যে বলছি, এই সরকার বাক স্বাধীনতায় সর্বক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে সেটা আরও প্রমাণিত হয়েছে।

“এই সার্কুলার জারির মধ্য দিয়ে এখন চলমান আন্দোলনকে দমন করার ক্ষেত্রে আরেকটি নজির স্থাপন করলো সরকার।”

‘ছাত্রলীগের হামলা-সংঘর্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য’

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের পিটুনির ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা করেছে জঘন্যভাবে; বলা যেতে পারে, তাদের হত্যার উদ্দেশে বাঁশ দিয়ে মারধর করে প্রচণ্ডভাবে। আজকের পত্রিকায় ছবিও এসেছে।

“ছাত্রদলের আহতরা এখন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। আমরা এই জঘন্য মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং যথাযথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সালর যিনি ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন তাকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।”

ফখরুল বলেন, “অনির্বাচিত আওয়ামী সরকারের নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের হামলা, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করা দেওয়া এবং সারাদেশে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠা একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে।

“কয়েকদিন আগে ইডেন কলেজের হোস্টেলে কী হয়েছে, তার আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হয়েছে আপনারা দেখেছেন, সব জায়গাতে তাদের নিজেদের মধ্যে গোলমাল সাধারণ ছাত্রদের ওপর আসে।”

ছাত্রদল নেতাদের দেখতে হাসপাতালে ফখরুল

বুধবার দুপুরে ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দেখতে কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব। চিকিৎসকদের কাছ থেকে তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।

এ সময় বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

পরে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ১৫ জন নেতা গুরুতর জখম হয়েছে। এই হাসপাতালে সাতজন ভর্তি আছে। তাদের অবস্থা গুরুতর। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।”

ছাত্রলীগকে ‘পেটোয়া বাহিনী’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের উপর ছাত্রলীগের বর্বরোচিত ও মধ্যযুগীয় কায়দায় এই হামলার মধ্য মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হল আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল।

“ছাত্রলীগ তাদের পেটোয়া বাহিনী। সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে তারা সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।”