নুরের চলে যাওয়ায় অনেক প্রশ্নের উদ্রেক: গণতন্ত্র মঞ্চ

গণ অধিকার পরিষদের সরে যাওয়াকে আন্দোলনের ক্ষতি মনে করছেন মঞ্চের নেতারা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2023, 02:11 PM
Updated : 7 May 2023, 02:11 PM

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালাচ্ছে গণতন্ত্র মঞ্চ, বছর না গড়াতেই সেখান থেকে নুরুল হক নুরের দলের সরে যাওয়াকে ক্ষতি হিসেবেই দেখছেন জোটটির নেতারা।

গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে গণ অধিকার পরিষদের সরে যাওয়ার ঘোষণার পরদিন রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলনের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জনমনে অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে।

পরিবর্তিত অবস্থায় গণতন্ত্র মঞ্চের এক বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বক্তব্য রাখেন মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

সেগুন বাগিচায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, বাংলাদেশ ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু উপস্থিত ছিলেন।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান, ফারুক হোসেন বৈঠকে যোগ দিয়ে তাদের অবস্থান জোট নেতাদের জানান। তবে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন না।

সরকার হটানোর আন্দোলনে বিএনপির কাছাকাছি থাকা সাতটি দল ও সংগঠন ২০২২ সালের ৮ অগাস্ট গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করে।

রেজা কিবরিয়া এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের দল শনিবার এই মঞ্চ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় নুর বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার দলের ভূমিকা সঙ্কুচিত ছিল।

Also Read: গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেল রেজা-নূরের গণঅধিকার পরিষদ

গণ অধিকার পরিষদের এই সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে সাইফুল বলেন, “বিশেষ করে এমন একটা সময়, যখন আমরা একটা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে, একটা অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র-প্রশাসনের কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রস্তাবনা নিয়ে যখন আমরা রাজপথে আন্দোলনে আছি, জনগণ ও বিরোধী দলের রাজপথে কার্যকর উপস্থিতিতে আন্দোলন যখন পর্যায়ক্রমে আরও বৃদ্ধি করবার আলোচনা আমরা করছি, আন্দোলন যখন একটা চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে, তখন গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে আমাদের এক শরিকের প্রত্যাহার করা, এটা নিশ্চয়ই আন্দোলনের জন্য একটা নেতিবাচক বার্তা দেবে।”

১০ দফা দাবিতে বিএনপির যে আন্দোলন চলছে,তাতে যুগপৎ কর্মসূচিতে গণতন্ত্র মঞ্চও রয়েছে। গণ অধিকার পরিষদ মঞ্চ ছাড়লেও যুগপৎ আন্দোলনে থাকবে বলে নুর জানিয়েছেন।

তারপরও তাদের মঞ্চ ছাড়ার সিদ্ধান্ত বিরোধী দলে বিভেদ নিয়ে সরকারের প্রচারকে ভিত্তি দেবে বলে মনে করেন সাইফুল হক।

তিনি বলেন, “সরকার যেভাবে বিরোধী দলের আন্দোলনের বিভক্তি তৈরি করতে চায়, প্রতিনিয়ত বিরোধী দলের বিরুদ্ধে তাদের যে বিষোদগার, আমাদের গণতন্ত্র মঞ্চ, বিএনপি, বিরোধী দলসহ …

“এটা পরোক্ষভাবে এটা সরকার এবং সরকারি দলের এই সমস্ত প্রচারণাকে … এটা আসলে আলোচিত করছে বলে … সেই জায়গা গুরুত্বপূর্ণ।”

Also Read: রব, মান্না, নুরদের সঙ্গে সাকি, সাইফুলদের গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ

গণতন্ত্র মঞ্চে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটি গণতান্ত্রিকভাবে নেওয়া হয় বলে দাবি করেন মঞ্চের সমন্বয়ক।

তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে তাদের (গণ অধিকার পরিষদ) আচরণের দ্বারা এগুলোর একটা ব্যত্যয় হয়ে আসছে। এটা নিয়ে তারা বিভিন্ন সময় কথা বলেছেন, কিছুটা তারা আত্মসমালোচনা করেছে, কখনও কখনও অ্যাপোলজি করেছেন।

“২ তারিখের সভায় তারা বলে গেছেন যে তারা কয়েকটা নীতিমালায় স্থির থাকলেও গণতন্ত্র মঞ্চে তাদের সদস্যপদ অব্যাহত রাখতে চান। তার মাত্র ৩/৪ দিনের ব্যবধানে এই সিদ্ধান্ত (প্রত্যাহার)।”

বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের উপস্থিতির বিষয়ে সাইফুল বলেন, “গণঅধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ আজকে আমাদের এখানে বেড়াতে এসেছিলেন। তারা প্রত্যাহারের বিষয়টা জানিয়ে গেছেন। আমরা তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি।

“আমরা যেটা তাদেরকে বলেছি, তাদের এই প্রত্যাহার ইতিমধ্যে জনমনে অনেকগুলো প্রশ্রের জন্ম দিয়েছে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। কী উদ্দেশ্যে, কী লক্ষ্যে আন্দোলনের এরকম একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে মঞ্চ থেকে প্রত্যাহার… এই প্রশ্নগুলোর জবাব দেওয়া এখন তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়িত্ব। এটা আমরা তাদেরকে বলেছি।”

তবে রাজপথে যুগপৎ কর্মসূচিতে গণতন্ত্র মঞ্চকে আগামীতেও পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।