বিএনপি নেতা বলেন, “অপারেশন সার্চ লাইটের পর দেশের লোক তো আর প্রতিবাদ করতে পারেনি সামনাসামনি। তাদেরকে সরে যেতে হয়েছে।”
Published : 05 Nov 2023, 07:28 PM
অজ্ঞাত স্থান থেকে ব্রিফিং করে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিলেন বিরোধী দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
‘গুহা থেকে ব্রিফিং’ চলছে বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা যে টিপ্পনি কেটেছেন, তার জবাবে বিএনপি নেতা স্মরণ করিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের কথা।
তিনি বলেছেন, সে সময় মুক্তিকামীরা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল টিক্কা খান এই ধরনের ‘হুঙ্কার’ দিতেন।
বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিন রোববার বিকেলে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন রিজভী।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর হরতাল ডাকেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর অবরোধের যে ঘোষণাগুলো এসেছে, তা দিয়েছেন আত্মগোপনে থাকা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
রিজভী বলেন, “সারা দেশে চলছে ‘গ্রেপ্তার ঝড়’। সেই গ্রেপ্তারে তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কাউকে আপনারা (ওবায়দুল কাদের) রেহাই দিচ্ছেন না। আর ওবায়দুল কাদের সাহেব মুচকি হাসি দেন, অট্টহাসি দেন যে, ‘কোথায় বিএনপির নেতারা?’, আর গুহা থেকে নাকি আমরা প্রেস বিফ্রিং করি।”
‘এই ধরনের কথা তো টিক্কা খানেরা বলতেন’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, “অপারেশন সার্চ লাইট যখন তারা করল ২৫ মার্চ, করার পরে তারা যখন দখল নিয়ে নিল, তখন দেশের লোক তো আর প্রতিবাদ করতে পারেনি সামনাসামনি। তাদেরকে সরে যেতে হয়েছে নিজের বাসা থেকে, বাড়ি থেকে।
“গ্রামে যেতে হয়েছে, না হলে দেশের সীমানা পার হতে হয়েছে। তখন এই টিক্কা খান, নিয়াজিরা ঠিক একই ধরনের কথা বলেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তারা দুষ্কৃতিকারী বলেছেন।”
একাত্তর আর এখনকার পরিস্থিতি একই রকম দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে টিক্কা খান, নিয়াজির ভূমিকা অবলম্বন করেছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা। সেই ভূমিকা দিয়েই বাংলাদেশের মানুষকে রক্তাক্ত করছে, সারা বাংলাদেশকে বিরোধী দল, বিএনপি শূন্য করার প্রক্রিয়া নিয়ে এগুচ্ছেন তারা।
“তারা (সরকার) নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ পরিবেশে একটা নির্বাচনের নামে তামাশা করবেন এবং শেখ হাসিনা যে তালিকা ধরিয়ে দেবেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেই তালিকা অনুযায়ী বিজয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবেন।”
গ্রেপ্তার করতে গিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটছে বলেও দাবি করেন রিজভী। বলেন, “তারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, কাউকে টাকার বিনিময়ে ছাড়ছে, আবার টাকা নিয়েও কাউকে ছাড়ছে না। এই রকম পরিবেশের মধ্য দিয়ে দেশ চলছে।
“নারায়ণগঞ্জে এক ডাক্তারকে না পেয়ে তার দুই ভাইকে ধরে নিয়ে যায় এবং তারপর তারা দর কষাকষি করে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই ভাইকে ছেড়েছে। ...গাজীপুরের কালিগঞ্জে মেট্রিক পরীক্ষার্থী তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।”
পরের কর্মসূচির ঘোষণা মঙ্গলবার
মঙ্গলবার ভোর ৬টায় অবরোধ শেষ হওয়ার পর আবার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে ‘অনাচারমূলক’ যে রাষ্ট্র, সেই রাষ্ট্রকে যদি সত্যিকার অর্থেই আইনের শাসনের রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তাহলে এই ‘দুর্বিনীত’ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে, এদের পতন ঘটাতে হবে।
“না হলে কারো মুক্তি নেই। আপনার, আমার শুধু নয়, আগামী দিনে আপনার ভবিষ্যত সন্তানদেরও মুক্তি হবে না।”
অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সকল নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেছি, নানা ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করবে সরকার, এরপর দায় চাপাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপরে।”
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ২৬১ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার এবং নয়টি মামলায় এক হাজার ৬০ জনের বেশি নতুন করে আসামি হয়েছে বলেও জানান বিএনপি নেতা।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৭ হাজার ৯৭৪ জন বলেও জানানো হয় ব্রিফিংয়ে।