যত আন্দোলন করবে করুক: শেখ হাসিনা

“বিএনপি যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ খুন করে- তাহলে আমেরিকার ভিসা পাবে না,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2023, 04:04 PM
Updated : 7 June 2023, 04:04 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি যত খুশি আন্দোলন করতে পারে, তাদের বাধা দেওয়া হবে না; কিন্তু তারা যেন ‘সন্ত্রাস’ করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, “তারা কিছু লোক জোগাড় করবে, বসে থাকবে, আন্দোলন করবে। করতে দাও, করতে দিবেন। আমি বলে দিয়েছি, যত আন্দোলন করতে চাইবে, করুক। আমরা কিছু করব না।"

ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

দেশি-বিদেশি যতই চাপই আসুক, তা মোকাবিলা করে জনগণের ভোটের অধিকার ‘সুরক্ষা’ করবেন বলেও অঙ্গীকার করেছেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ, শুধু গণতন্ত্রকে সুরক্ষা না- জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষা করেছে। আজকে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে এসেছে। এদেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করবার জন্য, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করবার জন্য এবং ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক ধারা যাতে চলে-তার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগই করেছে।

“দেশি-বিদেশি যত চাপ আসুক না কেন, ওই চাপের কাছে বাঙালি নতি স্বীকার করে না। আমার দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই সুরক্ষিত করব।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরাই এদেশে আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতন্ত্র এনেছি। এই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে আর কেউ বাধা দিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা গণতান্ত্রিক ধারা যাতে অব্যাহত থাকে, জনগণের ভোটের অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে…

“আজকে যেমন ১৪ বছরে বাংলাদেশটা পাল্টে গেছে, একচল্লিশ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা বন্ধে যে নতুন মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “(বিএনপি) আজকে আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে- আর আমাদেরকে উৎখাত করবে। একদিকে ভালো হয়েছে, সেটা হল এখন যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, অগ্নিসন্ত্রাস করে, মানুষ খুন করে- তাহলে আমেরিকার ভিসা পাবে না। যাদের কথায় নাচে তারাই খাবে, আমাদের কিছু করা লাগবে না। ওইটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নাই।”

দশম সংসদ নির্বাচনের সময়কার মতো সহিংসতা ঘটছে কি না- আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সেদিকে নজর রাখার নির্দেশ দিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, “নিজের চোখ, ক্যামেরা সবসময় ঠিক রাখতে হবে। কারণ ওদের আবার ওই দোষ আছে তো। একটা উসকানি দিয়ে তারপর ছবি উঠিয়ে ওই বাইরের কাছে কানতে থাকবে।“

বিএনপি জনগণের ক্ষমতায় ‘বিশ্বাস করে না’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, "বিশ্বাস করে, অন্য কোথাও থেকে এসে নাগারদোলা চাপিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কেউ দেবে না, দেয় না কখনও, ব্যবহার করে। ব্যবহার করবে কিন্তু ক্ষমতা দেবে না- এটা হল বাস্তবতা, বাস্তব কথা। ক্ষমতা একমাত্র জনগণই দিতে পারে। জনগণের সেই অধিকার, সচেতনতা আমরাই দিতে পেরেছি।

"আজকে গণতন্ত্রের কথা বলে, ভোটের অধিকারের কথা বলে। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল। কত ভোট পড়েছিল? ২/৩ শতাংশ ভোট পড়ে নাই। কিন্তু ঘোষণা দেওয়া হল সব ভোট নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে এখন সচেতন। সেই সচেতনতা আমরা সৃষ্টি করেছি।”

সরকার প্রধান বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার কেউ যদি কেড়ে নেয়, মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় না। খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল বলেই এই দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছিল, আন্দোলন করেছিল। এর ফলে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে- এই কথাটা সকলের মনে রাখা উচিত।"

শেখ হাসিনা বলেন, "এ ভোট চুরি ও ডাকাতি যারা করেছিল- আজকে তাদের মুখে ভোটের কথা শুনি, গণতন্ত্রের কথা শুনি… মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হওয়া দল থেকে গণতন্ত্রের কথা শুনতে হয়!"

২০০১ সালের নির্বাচনে ‘ব্যাপক কারচুপি’ করে আওয়ামী লীগকে হারানো হয়েছিল দাবি করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, "আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে সবসময় জয়ী হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ কোনোদিন পরাজিত হয় নাই। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটেই এসেছে। তার বাইরে কখনও ক্ষমতা দখল করে নাই।

“আজকে তারা বলে, ‘ভোটার বিহীন’; কে ভোটার বিহীন? ভোটারবিহীন তো ছিল খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান। ভোটারবিহীন ছিল এরশাদ। এটা তারা ভুলে গেছে? তারা তো ভোটার বিহীন হিসাবেই ক্ষমতা দখল করেছে। খালেদা জিয়াকে উপযুক্ত জবাব দিয়ে দিয়েছে এই দেশের জনগণ।"

বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনলে মনে হাসি পায় মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, “ওরা আবার গণতন্ত্রের কথা কয়। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করেছে আওয়ামী লীগ। শুধু গণতন্ত্র না, জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষা করেছে। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে এসেছে।"

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের কারণে দেশে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা এসেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “জরুরি অবস্থা এসে ভোটার তালিকা সংশোধন করেছে-এটা ঠিক। আমাদের দাবিই ছিল এটা। স্বচ্ছ ব্যালট বক্স, এটাও আমাদের দাবি ছিল। নির্বাচন কমিশন যাতে নিরপেক্ষ হয়, এর জন্য আমরা আইন করে দিয়েছি।

“তার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নির্বাচিত হচ্ছে, আমরা সরকার করছি না। তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও আমরা দিয়েছি। জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এই দেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যাতে থাকে, তার ব্যবস্থা আওয়ামী লীগই করেছে। হাই কোর্টের রায়ের ভিত্তিতে আমরা সংবিধান সংশোধন করে গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করেছি।"    

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জনগণের কাছে গিয়ে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান।