চরমোনাইয়ের পীর বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে সেখানে প্রত্যেক নির্বাচনে যারা হেরেছে তারা নির্বাচনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে।”
Published : 18 Jun 2023, 05:21 PM
দলীয় সরকারের অধীনে সামনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম জাতীয় সরকারের দাবি তুলেছেন। অন্য বিরোধী দলগুলো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি তুলেছে, তাতে সায় নেই তার।
রোববার পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের এই অবস্থান ঘোষণা করেন তিনি।
গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী ফয়জুল করিমের ওপর ‘হামলার’ অভিযোগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগ দাবিতে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন চরমোনাইয়ের পীর।
রেজাউল করিম বলেছেন, “বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চাই।”
সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনের যে ব্যবস্থা সংবিধানে করা হয়েছে, সেটি ‘দেশবাসী মেনে নেবে না’ বলেও ঘোষণা করেন তিনি।
জাতীয় সরকারের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
“জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।”
বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না এবং জাতীয় সরকারে যারা থাকবেন তারা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, এটাও ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তাব।
কেন জাতীয় সরকার চাইছে ইসলামী আন্দোলন?
এই প্রশ্নে দলের আমির বলেন, “অন্যান্য রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বললেও আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলছি। বিগত দিনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে সেখানে প্রত্যেক নির্বাচনে যারা হেরেছে তারা নির্বাচনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে।
“আমরা চাইছি, এমন একটা সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক যেখানে সবার অংশগ্রহণ থাকবে বিধায় কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না।”
জাতীয় সরকারে তারা কাদের চাইছেন সে প্রশ্নে চরমোনাইয়ের পীর বলেন, “জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী মহল এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিগণের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই আমরা জাতীয় সরকারে কারা থাকবেন এবং সরকার কাঠামো কি হবে তা প্রকাশ করব।”
এই দাবি নিয়ে আগামী ২৪ জুন মতবিনিময় করার ঘোষণাও আসে সংবাদ সম্মেলনে।
এই সরকারের অধীনে আর ভোট নয়
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সিটি নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও পাঁচটিতেই প্রার্থী দিয়ে ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন কমিশনের ‘পরীক্ষা নেওয়ার’ কথা বলেছিল।
প্রথমে গাজীপুর, এরপর বরিশাল ও খুলনায় তাদের প্রার্থী বেশ ভালো ভোটও পেয়েছে। তবে বরিশালে ভোটের দিন হাঙ্গামার মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ফয়জুল করিমের মুখে ঘুষি লাগে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দায়ী করেন হাতপাখার প্রার্থী।
সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি অভিযোগ এনে আগামী ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় ইসলামী আন্দোলন।
দলের অবস্থান তুলে ধরে রেজাউল করিম বলেন, “দল হিসেবে সামনে দলীয় সরকারের অধীনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, হয় নাই, বিধায় এই দলীয় সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না।”
সিইসির পদত্যাগ দাবি
বরিশালে ফয়জুল করিমকে ঘুষি দেওয়ার ঘটনায় সিইসির মন্তব্য ‘ওনি কি ইন্তেকাল করেছেন?’ ক্ষুব্ধ করেছে ইসলামী আন্দোলনকে।
চরমোনাইয়ের পীর বলেন, “মুফতি ফয়জুল করীমের শরীর থেকে রক্তক্ষরণ নিয়ে একজন ‘অবিবেচক উন্মাদের মত’ ‘তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও উপহাস’ করেছেন তিনি।…আমরা অবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চাই। তিনি পদত্যাগ করতে না চাইলে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় দ্রুত তার অপসারণ চাই।”
এই দাবিতে আগামী ২১ জুন নির্বাচন কমিশন কার্যালয় অভিমুখী মিছিলের ডাকও দেয় ইসলামী আন্দোলন।
দলের আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, আশরাফ আলী আকন, মাহবুবুর রহমান, নুরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব ইমতিয়াজ আলমও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।