রাজনীতি শেখাবে ‘পলিটিক্স ম্যাটারস’

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও ইউএসএআইডির যৌথ উদ্যোগে চালু হওয়া এ ওয়েবসাইট রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ‘জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে’ সহযোগিতা দেবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2022, 02:07 PM
Updated : 10 August 2022, 02:07 PM

রাজনীতি নিয়ে যারা আগ্রহী, তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহযোগিতা দিতে ‘পলিটিক্স ম্যাটারস’ নামে একটি ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু হয়েছে।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও ইউএসএআইডির যৌথ উদ্যোগে চালু হওয়া এ ওয়েবসাইট রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করবে বলে উদ্যোক্তাদের ভাষ্য।

বুধবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে এ ওয়েবসাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, রাজনীতি কী- দেশের অনেক রাজনৈতিক কর্মীই তা ‘জানেন না’।

“আজকে আমাদের দেশের রাজনীতি খ্যাতি লাভের সোপান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেখছি মানুষের মধ্যে মানবিকতাবোধ কমে আসছে, তারা মেশিনে পরিণত হচ্ছে। তারা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, আর কাউকে নিয়ে ভাবে না। কিন্তু একজন রাজনৈতিক কর্মীর কাজ রাষ্ট্র, সমাজকে নিয়ে ভাবা।”

তার ভাষায়, বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে একটি দেশ অবকাঠামোর দিক দিয়ে উন্নত হতে পারে, কিন্তু সেই উন্নয়ন টেকসই হয় না, যদি সেখানে মানবিকতা যুক্ত না হয়।

“মানুষ যেন পশুতে পরিণত না হয়, তার মধ্যে যেন মানবিকতা থাকে, সেজন্য ট্রেনিংয়ের দরকার।”

রাজনৈতিক কর্মীরাই এ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা কোনো একক রাজনৈতিক দলের কাজ বা দায়িত্ব নয়। দেশের সকল রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা।”

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী।

“নির্বাচন এলে যদি নির্বাচনকে বর্জন বা প্রতিহত করার সংস্কৃতি আমরা লালন করি, তাতে ‍কিন্ত গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা টিকবে না। আমি আশা করব, আমরা নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতি থেকে সরে আসব।

“আমাদের দেশের রাজনীতিতে যেটি সবচেয়ে বড় অন্তরায়, ‘সবকিছুতে না বলার’ যে সংস্কৃতি, তা আমাদের রাজনীতিতে তিক্ততা বাড়িয়েছে। আমাদের এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।"

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন ‘বিষাক্ত’ হয়ে উঠেছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রথমেই সব দলের জন্য ‘সমানভাবে’ রাজনীতি করার সুযোগ দিতে হবে।

“সংবিধান সংশোধন করে, আরপিও সংশোধন করে দেশে মেশিনারি ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”

সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, “দেশে গণতন্ত্র যদি ফিরে না আসে, জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে না পায়, ভোটাধিকারের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে না পারে, সেই প্রতিনিধি জনগণের কাছে জবাবদিহি না করে, তাহলে এই সমস্ত কার্যক্রম কোনো কাজে আসবে না। দুই-একটি গোষ্ঠী জোর করে ক্ষমতা দখল করবে।"

পলিটিক্স ম্যাটারস ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষও ‘প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদে’ পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচনের প্রশ্নে এবং আইনের শাসনের প্রশ্নে রাজনীতিবিদরা যদি এক জায়গায় আসতে না পারে, তাহলে যারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান করবে, সেই দায়িত্ব তাদের বহন করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের কোনোদিন ক্ষমা করবে না।”

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সুষ্ঠু, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ , কারণ নিজেদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকে সেখানে।

“সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। এক্ষেত্রে সমাজের সকলের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। সরকার, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের, গণমাধ্যমের ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা- সবারই এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে।”

পলিটিক্স ম্যাটারস ওয়েবসাইটে গণতন্ত্র ও নির্বাচন, দ্বন্দ্ব ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক প্রচার, কমিউনিটি অ্যাডভোকেসি ও রাজনৈতিক দল, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক দলের কার্যকর চর্চা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের উন্নয়ন, এবং প্রশিক্ষকের জন্য প্রশিক্ষণের কোর্স রয়েছে।

শিখন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে এই মডিউলগুলোর প্রতিটিতেই পাঠ্য উপকরণের সাথে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এনিমেশন ফিল্ম, ইনফোগ্রাফ ও কুইজ।