ডলারের কারণে দেশে সামনে ‘মারাত্মক’ সংকট দেখছেন ফখরুল

“আমরা ময়ুর সিংহাসনে বসতে অভ্যস্ত নই। আমরা জনগণের কাতারে থেকে জনগণের চেয়ারে বসতে অভ্যস্ত,” বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2023, 02:56 PM
Updated : 15 May 2023, 02:56 PM

ডলার সংকটের কারণে সামনে ‘মারাত্মক’ অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া বিষয়ক এক প্রশ্নে সোমবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। শুধু এটাই নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যারা আমদানি করেন যে সমস্ত ব্যবসায়ী- তারাও পণ্য আমদানি করতে পারছেন না ডলারের অভাবে। এটার প্রধান কারণ হচ্ছে যে, রিজার্ভের পরিমাণ এত কমে গেছে যেটা দিয়ে এখন আমদানি পণ্য কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

‘‘এটা তো এখনকার অবস্থা। কয়েকদিন পরে তো এই সংকট আরও বাড়বে যখন পদ্মা সেতুর টাকা পরিশোধ করতে শুরু হবে। আজকেই পত্রিকায় এসেছে, হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যে নতুন তৃতীয় টার্মিনাল হচ্ছে সেই তৃতীয় টার্মিনালে আগামী বছর থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।”

সেই টাকা কোত্থেকে আসবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন তারা ভালো করেই জানেন যে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে এবং এই রিজার্ভের পরিমাণ এতই নেমে এসেছে যেটা মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হওয়া শুধুমাত্র এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বিদেশ সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘জাতিকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ধারণা দিতে চান যে, এখানে বিকল্প কোনো নেতৃত্ব নেই। সেভাবে তিনি এবার সফরটি করেছেন। এই সফর সম্পর্কে তিনি ধারণা দিতে চান যে, এই সফর সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে।

‘‘কিন্তু আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যমে যে, এই সফরের রেজাল্ট জিরো প্রায়। জাপানের সাথে আগে ঠিক হয়েছিল কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে…সেটা হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিক ছাড়া ভিন্ন কিছু হয়নি বলে দাবি তার।

বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করে এবং এ খাতে ‘ইনডেমনিটি’ দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্য যে বিদ্যুৎ খাতে তারা যে দুর্নীতি করেছেন সেটা শুধুমাত্র তাদের লোকজনরা দুর্নীতি করেছেন এবং এখন জনগণের পকেট থেকে সেটা সারচার্জ হিসেবে কেটে নেওয়ার সমস্ত কাজগুলো চলছে।”

‘হঠাৎ এত পরে বিষোদগার কেন’

নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দেশের পণ্য বর্জন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এটা আমরাও প্রশ্ন উনি কেন হঠাৎ করে এতদিন পরে ওই স্যাংশনের ওপরে বিষোদগার করছেন। তিনি ভালো জানেন যারা স্যাংশন দেয় কীভাবে… কিছু দিন আগেও কিন্তু স্যাংশনের কারণে রাশিয়ার একটি জাহাজ বাংলাদেশ ফেরত দিয়েছে।

‘‘এখন বাংলাদেশ কী ক্রয় করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে- এটা আমরা সব জানি, তার পরিমাণ বলুন বা তার ভলিউম বলুন- এটাও আমরা সব জানি। সুতরাং এটা তিনি কেন বলেছেন তা আমরা সহজে বুঝতে পারি। তিনি সম্ভবত আমরা মনে হয় ইরিটেডেট হয়ে আছেন। কেন ইরিটেডেট হয়ে আছেন সেটা আমার জানা নেই।”

‘বিএনপি ময়ুর সিংহাসন চায় না’

১০ দফা আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রী ও নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘উনারা ময়ুয় সিংহাসনের কথা বলেছেন। আমরা ময়ুর সিংহাসনে বসতে অভ্যস্ত নই।

‘‘আমরা জনগণের কাতারে থেকে জনগণের চেয়ারে বসতে অভ্যস্ত এবং সেটা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে।”

এর আগে বিকালে বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচি প্রণয়নে বৈঠক করেন দলের নেতারা। সভায় ছয়টি উপ কমিটি গঠন করা হয়।

এতে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল হাই শিকদার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এবি এম ওবায়দুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ জেড রিয়াজ উদ্দিন নসু, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার অংশ নেন।