প্রকৃতপক্ষে সেদিন বিএনপি অফিসে ডাকাতি হয়েছে: মোশাররফ

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন, পুলিশের অভিযানের সময় বিএনপি অফিসে ‘ভাঙচুর ও লুটপাটে’ আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2022, 11:31 AM
Updated : 18 Dec 2022, 11:31 AM

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের তিন দিন আগে নয়া পল্টনে সংঘর্ষের পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের সময় ‘ভাঙচুর ও মালামাল লুটের’ অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওই ঘটনায় ‘৫০ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি’ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

মোশাররফ বলেন, “বিএনপির নয়া পল্টনের অফিস থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, নথিপত্র, ব্যাংকের কাগজপত্র, নগদ অর্থ লুট করা প্রকৃত পক্ষে একটি ডাকাতির ঘটনা। ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি হামলার পর তাদের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা কার্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর ও মালামাল লুটে অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

“এই ঘটনায় নগদ অর্থসহ ক্ষতি ও লুট হওয়া সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৫০ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। কোনো অফিস বা গৃহ তল্লাশির সময় মালিকপক্ষ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে রাখার সাধারণ আইন অগ্রাহ্য করে পুলিশ যা করেছে তা হানাদার বাহিনীর আচরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।”

ওই ঘটনায় আদালতে যাবেন কিনা– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মোশাররফ বলেন, “আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছি। আমরা দেখব। তারপরে কী করব এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা আপনারা জানতে পারবেন।”

সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশের পর ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। সমাবেশের জায়গা নির্ধারণ নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই গত ৭ ডিসেম্বর নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে একজনের প্রাণহানি ও শতাধিক আহত হয়।

এরপর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ, আটক করা হয় কয়েকশ নেতাকর্মীকে। অভিযানে কার্যালয়ের ভেতরের দরজা আসবাবপত্র, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভেঙে ফেলা হয় বলে অভিযোগ বিএনপির।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, “পুলিশ তাদের মামলায় বলেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা নাকি ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি ও ককটেল নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করেছে। বিপুল ও মারাত্মক সব আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কয়েক হাজার পুলিশকে ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি ও তাদের ভাষায় ককটেল দিয়ে আক্রমণ করার মত হাস্যকর অভিযোগ জনগণ বিশ্বাস করে না।

“পুলিশের এজাহারেই বলা হয়েছে যে, তারা ৭ ডিসেম্বর বিকালে মোট ১৭৯টি টিয়ারগ্যাস ও ৪৬০টি শটগানের গুলি ছুড়েছে এবং ছয়টি সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।”

এই বিএনপি নেতা বলেন, “এর বিপরীতে তাদের ওপর আক্রমণকারী বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবহৃত অস্ত্র হিসেবে আলামত দেখানো হয়েছে ফুটপাত ও রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ বস্তা ইটের টুকরা, ৮০টি বাঁশের লাঠি ও লালটেপে মোড়ানো কথিত ককটেলের ভগ্নাংশ।এমন অসম যুদ্ধের বিবরণ ছোটদের গল্প কিংবা স্বৈরাচারী শাসকদের প্রেসনোটেই শুধু দেখা যায়। তথাকথিত ক্রস ফায়ারের গল্পের মতই এসব গল্প এখন শুধু কৌতুকের খোরাক এবং অক্ষমের আর্তনাদ।”

৭ ডিসেম্বর বিএনপি কার্যালয়ে ‘পুলিশই’ ককটেল নিয়ে গিয়েছিল দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “সেদিন বিএনপি মহাসচিবকে তার অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের অফিসের নিচে বসিয়ে রেখে এবং অন্য নেতাদের কয়েকটি কক্ষে আটকে রেখে অসংখ্য টিয়ারগ্যাস, গুলি, সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে গোটা এলাকাকে রণক্ষেত্র বানায় পুলিশ।

“পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্য দলীয় কর্মীর মত প্রতিপক্ষকে হেয় ও বিপদাপন্ন করার জন্য সাদা ব্যাগে করে নিজেরাই ককটেল নিয়ে মহাসচিব ও জাসাসের কার্যালয়ের টয়লেটে মোট ১৫টি ককটেল রেখে তা উদ্ধারের যে নাটক করেছে তা মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়েছে।”

মোশাররফ বলেন, নয়া পল্টনের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা করেছে, যাতে গ্রেপ্তার ৪৫০ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে আসামি এবং দেড় হাজার থেকে ২ হাজার অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে। এই ঘটনার পর গত কয়েক দিনে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১৩ শ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

নয়া পল্টন থেকে চাল জব্দের ঘটনাকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “এখানে আমরা পুলিশের দেওয়া এজহারের তথ্য আপনাদের কাছে উপস্থাপন করেছি। এজহারে কোনো চালের কথা নেই, চালের বিষয় সম্পূর্ণ বানোয়াট।

“যেসব বস্তার কথা বলা হয়েছে চাল থাকলে অবশ্যই পুলিশের এফআইআরে থাকত। এফআরআইয়ে চালের কথা লেখা নেই। আসলে এখানে চাল ছিলও না।”

আগামী ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের দিন গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি, তবে সেই কর্মসূচির তারিখ পরবর্তীতে পিছিয়ে দিয়েছে দলটি।

এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশাররফ বলেন, “আমাদের আচরণ কিন্তু গণতান্ত্রিক। আমরা গণতান্ত্রিক আচরণ অতীতে দেখিয়েছি, ভবিষ্যতেও দেখাব এবং বর্তমানেও একটি রাজনৈতিক দল আরেকটি রাজনৈতিক দলের প্রতি সহনশীল হবে, তাদের মতামত, তাদের বক্তব্য রাখার সুযোগকে আরো সহজ করে দেবে-এটাই আমাদের নীতি। সেই নীতির প্রেক্ষাপটে আমাদের গণমিছিলের তারিখ পরিবর্তন। এটা আমাদের রাজনৈতিক দর্শন ও চিন্তাধারার প্রতিফলন।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেপ্তার সকল নেতাকর্মীর মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমূখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর:

Also Read: ১০ ডিসেম্বর: কথার খেলা গড়াল সহিংসতায়

Also Read: বিএনপি অফিস থেকে প্রিজন ভ্যানের মিছিল

Also Read: ১০ ডিসেম্বর: সংঘাত গড়িয়ে সমঝোতার ইঙ্গিত

Also Read: নয়া পল্টনে সংঘর্ষ: উসকানির অভিযোগে গ্রেপ্তার ফখরুল ও আব্বাস

Also Read: শেষতক সমাবেশ গড়াল গোলাপবাগ মাঠে