‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ৬ দফা প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছেন গণফোরাম সভাপতি।
Published : 29 Aug 2023, 02:56 PM
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক’ করার স্বার্থে অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এমতাবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উতকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
“আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন গণফোরামের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ১৯৯২ সাল থেকে। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সামনে ছিলেন তিনি।
সেই ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছিল বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি অভিযোগ আনে, সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ ‘কথা রাখেনি’।
মঙ্গলবারের আলোচনা সভায় ৬ দফার প্রস্তাবও উপস্থাপন করেন কামাল। বিএনপি ও সমমনাদের ‘এক দফা’ দাবির নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথাও সেখানে রয়েছে।
দাবিগুলো হল– রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেওয়া, সকল দলের ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা এবং নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
কামাল হোসেনের তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান দলের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
পরে মঞ্চে বসা কামাল হোসেন নেতা-কর্মীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “এই অনুষ্ঠান সফল করার জন্য আপনারা কষ্ট করে এসেছেন এজন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, অভিনন্দন জানাচ্ছি।
“আজকে জনগণের ঐক্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশে। আমাদের যে লক্ষ্যগুলো আছে, সেগুলোকে অর্জন করতে হলে এই ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমার একটাই আবেদন, আমরা সবাই মিলে জাতীয় ঐক্যের জন্য কাজ করি, ঐক্যবদ্ধ হয়েই আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারব।”
কামাল হোসেন বলেন, “গণফোরাম জনগণের মালিকানা ও জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র কায়েম করতে বদ্ধপরিকর। এদেশ কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, আপনার-আমার সকলের।
“আসুন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোচ্চার হয়ে সকল জনসাধারণের সাংবিধানিক দাবি আদায়ের জন্য এক যোগে কাজ করি এবং অপরাজিত ও কালো টাকা দুর্নীতিকে চিরতরে উৎপাটন করি এবং একত্রে দেশ গড়ে তুলি।”
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। গণসংগীত দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু হয়।
গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইয়াসিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের সভাপতি পরিষদ সদস্য মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এসএম আলতাফ হোসেন, মোকাব্বির খান, মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, মোশতাক আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, শাহ মো. নুরুজ্জামান, মাহফুজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
নেতৃত্বের মতপার্থক্যে ২০২১ সালে আলাদা আলাদা জাতীয় কাউন্সিল করে গণফোরাম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কামাল হোসেন; অন্যভাগে রয়েছেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু।