“এই সংসদ তো গ্রহণযোগ্যই ছিলো না জনগণের কাছে; এটা নির্বাচিত নয়, অনির্বাচিত সংসদ,” বলেন তিনি।
Published : 08 Apr 2023, 04:45 PM
দেশের বর্তমান সংসদের কোনো কার্যকারিতা দেখছেন না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যে বিশেষ অধিবেশন চলছে, সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, “গতকালকে পার্লামেন্টে অনেক বক্তৃতা করলেন। এমন বক্তৃতা করলেন যে, দিস ইজ দ্য বেস্ট পার্লামেন্ট। ওখানে তো হিসাব করলে খুঁজে পাবেন না…কয়টা মূলতবি প্রস্তাব ওখানে আছে, কয়টা জনগুরুত্ব সম্পন্ন বিষয় নিয়ে ওখানে দিনের কর্মসূচি মূলতবি করে আলোচনা হয়েছে- খুঁজে পাবেন না এবং যে কথাগুলো জনগণের দাবি হিসেবে উঠে আসে মাঝে-মধ্যে, সে বিষয়গুলো নিয়েও ওখানে আলোচনা হয় না।
“…সংসদ কি অবস্থায় আছেন, আপনারা ভালো জানেন। আমাদের মনে হয়, এই সংসদ সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর ছিল। এই সংসদ তো গ্রহণযোগ্যই ছিলো না জনগণের কাছে; এটা নির্বাচিত নয়, অনির্বাচিত সংসদ।”
শনিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের লিয়াজোঁ কমিটির সাথে বৈঠকের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতা নেই’
সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেওয়া বক্তৃতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করি…তিনি রাষ্ট্রপতি। কিন্তু সাংবিধানিকভাবেই তার হাতে খুব বেশি ক্ষমতা নাই। আমাদের অতীত তো সুখকর নয়।
“আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন, তখন নির্বাচন কমিশন গঠনে আমাদের প্রস্তাব নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম রাষ্ট্রপতির কাছে…উনার সাথে কথা বলতে। তাকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও দিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনোটাই তিনি ইমপ্লিমেন্ট করতে পারেননি। তার হাতে সেই ক্ষমতা নেই।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তিনি বলেছেন যে, সংঘাত দিয়ে, প্রতিহিংসা দিয়ে কখনো গণতন্ত্র প্র্যাকটিস করা যায় না-এই কথাগুলো ভালো।
“কিন্তু যারা প্র্যাকটিস করছেন, তারা নিঃসন্দেহে বুঝতে পারছে যে, গণতন্ত্রের প্র্যাকটিস তো সেখানে নেই। বরং কী করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা যায়, সেটা তারা প্র্যাকটিস করছেন।”
‘জনসেবার প্রতিষ্ঠানগুলো ফিট না’
বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি প্রথম দিনই বলেছি যে, সরকারের যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে জনগণকে সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে, সেই সব প্রতিষ্ঠানগুলো ফিট না। যাদের দায়িত্ব হচ্ছে এই অনিয়ম করে আপনার এরকম একটা বিপদজনক শপিং কমপ্লেক্স তৈরি করা সেখানে মুহূর্তে আগুন ধরলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে.. কাঠের তৈরি দোকান, অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থাই ছিলো না। যাদের দায়িত্ব তারা কিন্তু দায়িত্ব পালন করে নাই।
“পালন না করার কারণ হচ্ছে যে, তাদেরকে কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। এই সরকারের ভেতরে কোনো জবাবদিহিতা নাই। কারণ তারা নিজেরাই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় না।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেখেন না যে, আগুন লাগলো বঙ্গবাজারে। একটা হয়ত রিঅ্যাকশন স্বাভাবিকভাবে কিছু লোকজন আপনার ফায়ার ব্রিগেডের ওপর রেগে যায়, কিছু লোক বোধহয় ফায়ার ব্রিগ্রেডে আক্রমণ করেছে। তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজে প্রকাশ্যে বলছেন যে, তাদেরকে সিসিটিভি দিয়ে চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
“যে মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে গেছে, পথে পথে কাঁদছে সেই মানুষগুলোর প্রতি সহানূভূতি দূরে থাক, সেখানে উল্টো তাদেরকে ধরে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে-এটা প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু না।”
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগুন নিয়ে ‘রসিকতা’ করছেন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এতো বড় ক্ষতি হয়ে গেল, এতো মানুষ সর্বশান্ত হয়ে গেছে। তিনি খুব ভালো জানেন এটাই একটা ফাইজলামি কথা হইতেছে যে, এটা বিএনপি নাশকতা… ইত্যাদি ইত্যাদি। উনি জানেন যে, এটা উনি মিন করে বলতেছেন না, কিন্তু উনি বলতেছেন।
‘‘এরকম রসিকতা করার সময়টা এটা? যেখানে এতো মানুষ কষ্টে আছে, এত মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে, এতো মানুষ তাদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে, শেষ হয়ে গেছে তারা আরকি…আজকে যদি এসব রসিকতা-ফাইজলামি না করে সিরিয়াস যদি হতো, তাহলে আরেকটা আগুন লাগা হইছে হয়ত সেগুলো সাবধানতা অবলম্বন করতে পারতো আর নাও হতে পারতো সেগুলো।”
‘ফায়ার ব্রিগেড আরও আগে মার্কেটে যেতে পারত না?’
মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা দেখেছে গতকাল ফায়ার ব্রিগেডের একটা টিম- তারা গাউসিয়া মার্কেটে গেছেন পরিদর্শন করতে। এই কাজগুলো আগে করলে হয় না।
“বঙ্গবাজার মার্কেট একেবারে ভস্ম হয়ে গেল, ছাই হয়ে গেল। তারপরে উনাদের মনে পড়লো যে, আরে গাউসিয়া তো আছে। গাউসিয়া যাওয়া দরকার। একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন সরকার, তাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্বই নেই, তাদের জবাবদিহিতা নাই কোথাও।”
‘সংঘাত এড়াতে হলে ওদেরকে পদত্যাগ করতে হবে’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকার যদি চায় যে, সংঘাত এড়িয়ে তারা সামনের দিকে যাবেন- তাহলে প্রথম কাজটা করতে হবে বিরোধী দলগুলো যেটা চাচ্ছে, সেই দাবি পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ পদত্যাগ করে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।
“আমরা সবগুলো যে উইপেন- সব ব্যবহার করেছি। ২০১৮-তে তাদের কথা বিশ্বাস করে আমরা নির্বাচনে গিয়েছিলাম…পরিণতি কী হয়েছে আপনারা দেখেছেন। এখন তো আমরা অনেকদিন ধরেই বলছি যে, আপনারা দয়া করে পদত্যাগ করেন। এগ্রি করুক যে, আমি পদত্যাগ করব, এগ্রি করুক যে, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয় নিয়ে কথা বলব- তাহলেই হয়ে যায়।”
ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ না করলে সংলাপে যাবেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তাদেরকে বিশ্বাস করার প্রশ্নই উঠতে পারে না। আগে পদত্যাগ করতে হবে, তারপরে সংলাপ এবং ঘোষণা দিতে হবে যে আমি পদত্যাগ করব।”
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে বৈঠকে ছিলেন ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাইফুদ্দিন মনি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার একাংশের খন্দকার লুতফর রহমান, এসএম শাহাদাত, বিকল্পধারা বাংলাদেশের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডল, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।