আপাতত জাপা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না জি এম কাদের

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জি এম কাদেরের আপিল ৯ জানুয়ারির মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2022, 09:55 AM
Updated : 14 Dec 2022, 09:55 AM

জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা, তা এখন নির্ভর করবে জজ আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর।

পার্টি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জি এম কাদের নিম্ন আদালতে যে আপিল করেছিলেন, আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে তা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আর ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতের দেওয়া ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে হাই কোর্ট যে আদেশ দিয়েছিল, সর্বোচ্চ আদালত তা বাতিল করে দিয়েছে।

হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা ও দলটির সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা যে আবেদন করেছিলেন, তার নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বুধবার এ আদেশ দেয়।

Also Read: আবারও আটকে গেলেন জি এম কাদের

সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের ফলে জি এম কাদের আপাতত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না বলে দুই পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন। 

আপিল বিভাগে জি এম কাদেরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। মৃধার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ।

আদেশের পর সাঈদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্ট রুলসহ যে আদেশ দিয়েছিল, তা বাতিল করেছে আপিল বিভাগ। ফলে জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে পারবেন না।

“নিম্ন আদালতের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার আদেশের বিরুদ্ধে জিএম কাদেরের করা আপিল দ্রুত শুনানি করতে বলা হয়েছে। আগামী ৯ জানুয়ারি জেলা জজ আদালতে এই সংক্রান্ত শুনানির তারিখ রয়েছে।”

জিএম কাদেরের আইনজীবী শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, “জিয়াউল হক মৃধার করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। জেলা জজ আদালতে জিএম কাদেরের করা আপিলটি ৯ জানুয়ারি শুনানি করতে বলেছে।

“ফলে জিএম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন কিনা তা জানতে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”

 জাতীয় পার্টিতে গৃহবিবাদের মধ্যে দলটি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা আদালতে যান।

৪ অক্টোবর তার করা মামলায় বলা হয়, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ার পর হাই কোর্ট বিভাগে একটি রিট মামলা বিচারাধীন থাকার পরও জিএম কাদের ‘জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে’ ওই বছর ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিল করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন।

এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর জিয়াউল হক মৃধাকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন কাদের। ওই আদেশ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করতে এবং হাই কোর্ট বিভাগে ২০১৯ সালে দায়ের করা রিট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির পরবর্তী কাউন্সিল স্থগিত রাখতে আদেশ চাওয়া হয় মামলায়।

ওই আবেদন শুনে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক গত ৩০ অক্টোবর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসাবে জি এম কাদেরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দায়িত্ব পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। আদেশটি প্রত্যাহার চেয়ে কাদেরের করা আবেদন ১৬ নভেম্বর একই আদালত খারিজ করে দেয়।

পরে জিএম কাদের এই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন। বিচারক সেই আপিলের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির জন্য ২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি দিন ঠিক করে দেন।

জি এম কাদের ওই শুনানি এগিয়ে আনতে ফের আবেদন করেন। গত ২৪ নভেম্বর তা খারিজ করে দেন বিচারক। এরপর হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন জিএম কাদের। 

পরে ২৯ নভেম্বর বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে যুগ্ম জেলা জজের নিষেধাজ্ঞার আদেশ ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করে রুল জারি করেন।

এরপর জিয়াউল হক মৃধা হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গেলে ২০ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। 

এর ধারাবাহিকতায় আপিল বিভাগে শুনানির পর বুধবার বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিল সর্বোচ্চ আদালত।