ছদ্মবেশে মানুষের কাছে গেলে কথা শুনে ‘অসুস্থ হবেন মন্ত্রীরা’: নজরুল

“আজকাল সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মানুষ আগে ভয় পেত, এখন আর ভয় পায় না,” বলেন এই বিএনপি নেতা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2023, 10:36 AM
Updated : 24 Feb 2023, 10:36 AM

‘সরকারের সম্পর্কে মানুষের মনোভাব’ কী, সে বিষয়ে ‘স্পষ্ট ধারণা’ নিতে মন্ত্রীদেরকে পরিচয় গোপন করে ছদ্মবেশে বাসে চড়তে বা চায়ের দোকানে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি মনে করেন, বাসে বাসে চড়লে মন্ত্রীরা দুটি স্টপেজও যেতে পারবেন না। দোকানে কিছুক্ষণও টিকতে পারবেন না। তারা ‘অসুস্থ হয়ে যাবেন‘।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির এই নেতা মন্ত্রীদেরকে এভাবে ‘বাদশাহ হারুন অর রশীদের’ ভূমিকায় দেখার আগ্রহের কথা বলেন। তিনি আরবে ইসলামি খিলাফতের পঞ্চম ওই শাসকের নামও উল্লেখ করেন।

বিএনপি নেতা বলেন, “বাসের মধ্যে মন্ত্রী সাহেবরা যেয়ে বসেন একদিন খলিফা হারুনুর রশীদের মত ছদ্মবেশ নিয়ে, শোনেন বাসের মধ্যে লোকেরা আপনাদের সম্পর্কে কী কথা বলে।

“আল্লাহর কসম, একটা-দুইটা স্টপেজের বেশি থাকতে পারবেন না বাসে। অসুস্থ হয়ে নেমে এসে পড়বেন যে, আল্লাহ বাঁচাও। যান বসেন কোনো গ্রামের চায়ের স্টলে, সেখানে কী বলে আপনাদের সম্পর্কে লোকজন। কিন্তু শুনবেন না আপনারা এসব।”

বাদশাহ হারুন রাতের আঁধারে ছদ্মবেশে নাগরিকদের পরিস্থিতি দেখতেন বলে প্রচার আছে। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি গল্প হল, এক রাতে একটি বাড়িতে যাওয়ার পর শিশুদের কান্না শুনতে পান তিনি। পরে জানতে পারেন, শিশুদের মা তার সন্তানদের প্রবোধ দিতে রান্না চড়ানোর ভান করেন। কিন্তু তাতে খাবার ছিল না, ছিল পাথর। পরে বাদশাহ সেই নারীকে সহায়তা করেন।

নজরুল ইসলাম খান মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে জনগণ এখন ‘গ্রামে-গঞ্জে ঐক্যবদ্ধ’।

তিনি বলেন, “মানুষ আগে ভয় পেত, এখন আর ভয় পায় না।”

দেশের পরিবর্তন আন্দোলনের মাধ্যমেই হবে বলে মনে করেন এই বিএনপি নেতা।

সরকার ‘সংবিধান নিয়ে তামাশা’ করছে বলেও অভিযোগ নজরুলের। তিনি বলেন, “কী শুরু করেছেন আপনারা (সরকার)? সংবিধানের কথা বলেন… আরে সংবিধান নিয়ে তো আপনারা তামাশা করতেছেন।

“আপনারা সংবিধানে লিখে রাখেন সমাজতন্ত্র কায়েম করবেন আর চর্চা করেন মুক্ত বাজার অর্থনীতি, এই দুইটা কি একসঙ্গে যায়?

“বইতে লিখে রাখবেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। আবার বলবেন, আপনারা ধর্ম নিরপেক্ষ। এই কী যায়? আপনারা যে সংবিধান নিয়ে রঙ-তামাশা করেন এই সংবিধানের দোহাই দিয়ে জনগণের আন্দোলন প্রতিহত করতে চান। অসম্ভব।”

নজরুল বলেন, “পারবেন না, কেউ পারে নাই, আপনারাও পারবেন না। ইনশাল্লাহ আগমী দিনে আমরা এগিয়ে যাব।” 

বিএনপি ক্ষমতায় ফিরলে খুলবে বন্ধ মিডিয়া

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ এবং দৈনিক দিনকালসহ বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এই কর্মসূচিতে আসেন নজরুল।

এর আয়োজক ছিল ‘সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ’ নামে বিএনপিপন্থি একটি সংগঠন।

নজরুল বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে যেসব গণমাধ্যম বন্ধ হয়েছে, ক্ষমতায় আসতে পারলে সেগুলো খুলে দেবে তার দল।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মালিকানাধীন দৈনিক দিনকাল পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি।

গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মমিনুর রহমান পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিলের অফিস আদেশ জারি করে। পরে দিনকাল কর্তৃপক্ষ এর বিরুদ্ধে গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে আপিল করেছিল। এ আবেদনের কয়েক দফা শুনানির পর প্রেস কাউন্সিল রোববার এ রায় দেয়।

গণমাধ্যমগুলো ‘সরকারের পক্ষে প্রচার করছে’ বলেও অভিযোগ নজরুল ইসলাম খানের। তিনি বলেন, “যারা টিভি চ্যানেলে বসে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া উল্টা-পাল্টা সব প্রচার করছেন, কিংবা সরকারের পক্ষে নির্লজ্জ দালালি করছেন, তা সৎ সাংবাদিকতার স্বার্থে বন্ধ করা উচিত।”

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরী, দৈনিক দিনকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, পেশাজীবী নেতা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, এম এ আজিজ, লুৎফর রহমান, গোলাম হাফিজ কেনেডি, শামসুল আলম, নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, রাশেদুল হকও এ সময় বক্তব্য দেন।