২৫ জানুয়ারি দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা গণতন্ত্র মঞ্চের

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার গণতন্ত্র মঞ্চের ‍বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে নতুন এই কর্মসূচি আসে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2023, 12:39 PM
Updated : 16 Jan 2023, 12:39 PM

‘সরকার হটানোর যুগপৎ আন্দোলনের’ অংশ হিসেবে আগামী ২৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের ‍বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে প্রচলিত সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে বাকশাল ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে স্বপন বলেন, “আপনারা জানেন- বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন। ৩ মিনিটে সেদিন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বাংলাদেশের সংবাদপত্র, বাংলাদেশের ভোটাধিকার সব কিছু হরণ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল।

“সেই ২৫ তারিখ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তৈরি, দ্রব্যমূল্য ও মানুষকে বাঁচাবার লক্ষ্যে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করব।”

গণতন্ত্র মঞ্চে যে সাতটি দল আছে, তাদের কয়েকশ নেতাকর্মী এই সমাবেশ ও গণমিছিলে অংশ নেন। তারা ‘ভোট চোর সরকার, আর নাই দরকার’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, আর নাই দরকার’, ‘আগুন জ্বালাও আগুন জ্বালাও, ভোট চোরের আস্তানায়’-এমন নানা স্লোগান দেন।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “এ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ১০/১৫ বছরের রাজনীতি এই বছর ঠিক হবে। আমরা বলেছি, গোটা দেশের দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক সকল মানুষ যুগপৎভাবে রাজপথে দাঁড়িয়ে আজকে আমি আমার দেশকে রক্ষা করব, গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করব, ভোটাধিকারকে প্রতিষ্ঠা করব।

“সেই লড়াই গণতন্ত্র মঞ্চ শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নেবে। এই লড়াইয়ে আপনারা সকলে অংশ নেবেন- এই প্রত্যাশা আমরা করি।”

আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই সরকার বিদায় নেবে। কিন্তু আইএমএফের লোন মানুষের গলায় ফাঁস হিসেবে থেকে যাবে। দেশের জনগণকে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে।”

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, “এই সরকারের অধীনে কোনো ভোট হবে না। ১৪ বছরে এই সরকার এত অপরাধ করেছে, এত লুট করেছে, ভোটের মুখোমুখি হবার সাহস তাদের নাই।

“জামানত হারানোর যুগে প্রবেশ করেছেন। মঞ্চ-টঞ্চ আজকাল ভেঙে পড়ছে। কাজেই ক্ষমতার মসনদটাও খুব দ্রুতই ভেঙে পড়বে। কোনো আওয়াজ, আপনাদের দমনপীড়ন আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা- এগুলো আপনাদেরকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পারবে না।”

সাকি বলেন, “উনারা (সরকার) বলেন- অতি বাম, অতি ডান সব নাকি একসাথে হয়েছে। আমরা বলি, প্রধানমন্ত্রী আপনি ভোট চুরি করে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। ১৮ কোটি মানুষের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছেন। তারা এখন এক কাতারে আছে।

“১৮ কোটি মানুষ আজকে একসাথে লড়াই করছে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষের মধ্যে কীভাবে বৃহত্তর ঐক্য তৈরি করা যায় এবং সেই ঐক্যে সরকার বিভ্রান্তির চেষ্টা করবে। তারা জামায়াত কার্ড খেলবে, তারা আন্দোলনের সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করবে, তারা ভয়-ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করবে। কিন্তু এসব মোকাবিলা করে সমস্ত মানুষকে রাজপথে আসতে হবে।”

জনগণকে নতুন স্বপ্ন দেখানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “সেই স্বপ্ন হচ্ছে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, সেই স্বপ্ন হচ্ছে নতুন রাষ্ট্রের গ্যারেন্টি- একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। আর তার জন্য দেশের সংবিধান সংস্কার করতে এ সমস্ত দাবি আমরা তুলেছি।

“ইতোমধ্যে বিএনপি রাজপথে, অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় আছি। আমরা অবিলম্বে একটা ন্যূনতম দফা-দাবিনামা তৈরি করে এই আন্দোলনকে আরও বৃহত্তর রূপ দেব এবং গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব।”  

শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ভাসানী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মীর মোফাজ্জল হোসেন, হাবিবুর রহমান হাবিব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, মোমিনুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, জেএসডির একেএম জামির বক্তব্য দেন।

গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমাবেশ

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ দিন সকালে বিক্ষোভ সমাবেশের একই কর্মসূচি পালন করে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য।

বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) সাধারণ সম্পাদক গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের হারুন চৌধুরী, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক কমরেড আবুল কালাম আজাদ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের হারুন আল রশিদ তাতে বক্তব্য দেন।

পরে বিক্ষোভ মিছিল করে জোটের নেতাকর্মীরা পুরানা পল্টনে নিজেদের কার্যালয়ে যায়।