সাবের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘প্লেট চুরি’র অভিযোগ সত্য মনে করি না: আব্বাস

বিএনপি নেতা আদালতে বলেন, “২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকার ‘আমরা সবাই চোর’- এই বাক্যটি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল।”

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2023, 01:16 PM
Updated : 15 Nov 2023, 01:16 PM

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফেরির ‘প্লেট চুরির’ অভিযোগ এনে যে মামলাটি করা হয়েছিল, সেই ঘটনাটি ‘সত্য ছিল না’ বলে মত প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। 

সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বুধবার ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষীর অবশিষ্ট জবানবন্দি দেওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের জেরার জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মির্জা আব্বাসকে এক পর্যায়ে বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে খাবার প্লেট চুরির মামলা হয়েছিল। প্লেট চুরির সে ঘটনা কি আপনি সত্য বলে মনে করেন?”  

জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, “আমি তা সত্য বলে মনে করি না।”

রাষ্ট্রপক্ষে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এরপর
প্রশ্ন করেন, “আপনার মা তার বাবা অর্থাৎ আপনার নানার কাছ থেকে কত সম্পত্তি
অর্জন করেছিলেন?” 

আব্বাস বলেন, “আমার মা তার বাবা অর্থাৎ আমার নানার কাছ থেকে কোনো সম্পত্তি নেননি।”

আরেক প্রশ্নে বিএনপি নেতা বলেন, “ঢাকা ব্যাংকের শেয়ার ছাড়া আমার মায়ের আর কোনো সম্পত্তি নাই। ঢাকা ব্যাংকের এই শেয়ার আমার মা আমাকে দিয়েছেন। 

“আমার মা জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা পাঁচ বোন দুই ভাই ছিলাম। কিন্তু আমার মা ঢাকা ব্যাংকের শেয়ার আমার অন্য কোনো ভাই বোনকে দেন নাই, যদিও তখন আমার ভাই, বোন সাবালক ছিল।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার মায়ের নামে থাকা সব সম্পত্তি যে আমার, তা সঠিক না।…চার কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ২৫৬ টাকা বৈধ উৎস ব্যতীত অর্জন করেছি, এ কথাটাও সঠিক না।”

অন্য এটি জেরার জবাবে আব্বাস বলেন, ২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুদকে যে সম্পদের হিসাব দিয়েছেন, তার বিপরীতে কর দিয়েছেন। 

আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন
এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ অগাস্ট দুদকের উপপরিচালক মো. শফিউল আলম রাজধানীর রমনা থানায় মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে দুদকের উপপরিচালক মো. খায়রুল হুদা আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে তার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ২২ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। 

২০০৮ সালের ১৬ জুন আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক। বিচার চলাকালে আদালত ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করে।

একই অভিযোগে সে সময় মোট তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে দুটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। অপর মামলাটি এখনও চলছে।

জেরার আগে জবানবন্দিতে মির্জা আব্বাস বলেন, “২০০৭ সালে আমার এবং আমার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে দুদক মামলাটি দায়ের করে। তখন মামলাটি নিয়ে হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে গেলে আমার স্ত্রীর অংশটি রদ করে আমার অংশটি রেখে দেয়। আজ আমি সেই মামলায় আমার অংশে সাফাই সাক্ষ্য দিচ্ছি। 

“একই সময় তখন আমার এবং আমার স্ত্রীর নামে আরো দুইটি মামলা হয়। একই বিষয়ে সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় আমাদের উভয়ের সাজা হয়। পরে হাই কোর্ট এবং আপিল বিভাগ আমাদের খালাস দেয়।

“২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী সমর্থিত সরকার ‘আমরা সবাই চোর’- এই বাক্যটি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল।”

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে যখন তিনি গণপূর্ত মন্ত্রী ছিলেন, তখন গুলশানের কড়াইল বস্তি সংলগ্ন লেকটি ভরাট করার জন্য একটি ‘নামকরা পত্রিকার সম্পাদক’ তার বাসায় দিয়ে ৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন বলেও দাবি করেন মির্জা আব্বাস। 

তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে চুপ করে থাকি। সম্পাদক আরো বলেন যে, তার কাছে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ আছে।“

১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বতর্মান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপ্তম সংসদের শেষ অধিবেশনে জলাধার ভরাট নিষিদ্ধ আইন করে যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পরবর্তীতে সে আইন মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করে লেক ভরাট করা ঠেকাই।”

এ পর্যায়ে বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম আব্বাসকে বলেন, “আপনার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত কোনো সম্পদ আছে কি না?” 

বিএনপি নেতা বলেন, “আমার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ নেই। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত কোনো সম্পদের সঙ্গে আমি পরিচিত নই।”

জবানবন্দির সব শেষে তিনি বিচারককে উল্লেখ করে বলেন, “আল্লাহতাআলার পর ইহকালে আপনি সাচ্চা বিচারের মালিক। পৃথিবীতে আপনারা আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করেন।”

জবানবন্দি দেওয়ার সময় পকেট থেকে ওষুধ বের করে খান আব্বাস। এ সময় ‘অসুস্থতা বোধ করছেন’ জানিয়ে জেরা পিছিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু বিচারক তাকে চেয়ারে বসেই জেরার জবাব দিতে বলেন।

এরপর বিচারক আগামী ২২ নভেম্বর পরবর্তী সাফাই সাক্ষ্যের তারিখ রাখেন।

বিএনপি নেতার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম, শাহীনুর ইসলাম অনি, মহিউদ্দিন চৌধুরী এ সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। তারা আব্বাসকে সাফাই সাক্ষ্য দিতে সহযোগিতা করেন। 

গত ১২ নভেম্বর মির্জা আব্বাস নিজেই নিজের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য শুরু করেন। ঢাকা ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা শাহজাহান মিয়া ও কাজী শিফাউর রহমান হিমেলও সাক্ষ্য দেন তার পক্ষে।

তারা আদালতে বলেন, মির্জা আব্বাস ঢাকা ব্যাংকের শেয়ার নিয়মতান্ত্রিকভাবে পান। বোনাস এবং ডিভিডেন্ড শেয়ার হিসাবে ঢাকা ব্যাংকের অংশীদার হন। ২০০৭ সালে দুদক এসব নথি জব্দ করে নিয়ে যায়।

গত ৮ নভেম্বর আব্বাসের পক্ষে আইনজীবী এ কে এম শাহজাহান এবং এনআরবি ব্যাংকের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট নুরুল হোসেন খানও সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।  

শাহজাহান সেদিন আদালতে বলেন, তিনি শাহজাহানপুরের একটি জমি কেনার জন্য বায়না বাবদ মির্জা আব্বাসকে ৫০ লাখ টাকা দেন। ওই টাকা ‘অবৈধ নয়’। 

এনআরবি ব্যাংকের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট নুরুল হোসেন খান বলেন, আব্বাসের কর ফাইল তিনি দেখতেন। তার কোনো ‘গোপন সম্পদের বিষয় নেই’।

গত ৩১ অক্টোবর মামলাটি সাফাই সাক্ষ্যের জন্য রাখা হয়। কিন্তু সেদিন মির্জা আব্বাস আদালতে হাজির হননি। কোনো সাফাই সাক্ষীও উপস্থিত হননি। 

সেদিন আদালত জামিন বাতিল করে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে গত ২৮ অক্টোবর কাকরাইল ও বিজয়নগরে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের পর শাহজাহানপুর থানার একটি নাশকতার মামলায় আব্বাসকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

এরপর দুদকের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।