আগেও তারা নৌকার প্রার্থী হয়েছেন, অনেকে নির্বাচিতও হয়েছেন; মাঝে বিরতি দিয়ে আবার তাদের দলের মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
Published : 26 Nov 2023, 11:20 PM
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ পড়ে মন ভেঙেছিল তাদের, পাঁচ বছর অপেক্ষার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের নৌকার টিকেট পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা।
তাদের মধ্যে আছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
এছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের লড়াইয়ে নামতে দলের প্রতীক নৌকা ফিরে পেয়েছেন।
সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে যে ২৯৮ আসনের মনোয়ন রোববার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ, তাতে এরকম ২৬ পুরনো মুখ নতুন করে ফিরে এসেছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন।
১৯৯৬ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে চাঁদপুর-২ আসন থেকে নির্বাচিত হওয়া সাবেক ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাদ পড়েন। তার বদলে নৌকার মনোনয়ন পান নূরুল আমিন রুহুল। এবার মায়াকেই ওই আসন ফিরিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া জাহাঙ্গীর কবির নানক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন । কিন্তু ২০১৮ সালে নৌকার টিকেট তার ভাগ্যে জোটেনি। তার বদলে মনোনয়ন পান সাদেক খান। এবার ওই আসনে ফের নানককে মনোনয়ন দিয়েছে দল।
আব্দুর রহমান ২০০৮ সালের নবম ও ২০১৪ সালে ফরিদপুর-১ আসন থেকে জয়ী হলেও ২০১৮ সালে মনোনয়ন পান মঞ্জুর হোসেন বুলবুল। এবার আব্দুর রহমানকেই ওই আসনে নৌকার মাঝি করেছে আওয়ামী লীগ।
মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জিতে এমপি হয়েছিলেন বাহাউদ্দিন নাছিম। ২০১৮ সালে ওই আসনে নৌকার টিকেট পান আবদুস সোবহান গোলাপ। এবারও তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর বাহাউদ্দিন নাছিমকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-৮ আসনের মনোনয়ন, যে আসন থেকে গত তিনবার এমপি হয়েছেন আওয়ামী লীগের শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
যুবলীগের সাবেক নেতা চয়ন ইসলাম সিরাজগঞ্জ-৬ আসন থেকে বাদ পড়েন। সেই আসনে ২০১৮ সালে তার বোন মেরিনা জাহান কবিতাকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার বোনকে বাদ দিয়ে আবারও মনোনয়ন পেলেন ভাই।
আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আব্দুস সাত্তার ময়মনসিংহ-৮ আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন ২০০৮ সালে। পরের দুই নির্বাচনে ওই আসন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেয় জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামকে। এবার আবার সাত্তারকে ওই আসনে নৌকার টিকেট দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার-১ আসনে তিনবার নৌকার মনোনয়ন পেয়ে জিততে না পারায় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে (সিআইপি) ২০১৮ সালে আর মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার তার হাতে আবারও নৌকার বৈঠা তুলে দেওয়া হয়েছে।
মোশতাক আহমেদ রুহী নেত্রকোণা-১ আসনের এমপি হয়েছিলেন ২০০৮ সালে। পরের দুই নির্বাচনে ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ছবি বিশ্বাস ও মানু মজুমদার। এবার আবার রুহীর কপালে মনোনয়ন জুটেছে।
মো. আব্দুল ওয়াদুদ ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজশাহী-৫ আসনের এমপি হয়েছিলেন, তবে ২০১৮ সালে বাদ পড়েন। সেবার মনসুর আহমেদকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। পাঁচ বছর পর আবারও দলের প্রার্থী হচ্ছেন ওয়াদুদ।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে মো. এমদাদুল হক সবশেষ ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে মনোনয়ন পেলেও জিততে পারেন নি। এরপর থেকে আসনটি জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দিয়ে আসছিল আওয়ামী লীগ। রোববার ঘোষিত মনোনয়নের তালিকায় ওই আসনে আবারও নৌকা পেয়েছেন এমদাদুল।
ময়মনসিংহ-৯ আসনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকেটে এমপি হন আব্দুস সালাম। পরের দুই নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান আনোয়ারুল আবেদীন খান। আগামী নির্বাচনে সেখানে আবারও সালামকে প্রার্থী করেছে আওয়ামী লীগ।
২০০১ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের কাছে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আব্দুস সালাম। এরপর দীর্ঘদিন আর মনোনয়ন পাননি তিনি। গত দুই মেয়াদে ওই আসনে আওয়ামী লগের এমপি ছিলেন সাবেক ক্রিকেচার নাইমুর রহমান দুর্জয়। এবার তাকে বাদ দিয়ে আবার সালামের হাতে মনোনয়ন তুলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
ফেনী-৩ আসনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির প্রার্থী কাছে হেরেছিলেন মো. আবুল বাশার। গত দুই নির্বাচনে আসনটি জোটের প্রার্থীদের ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার বাশারকে আবার নৌকা প্রতীক দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবার মো. মজিবর রহমান মজনু। ২০০১ সালে তিনি মনোনয়ন পেয়েও হেরে গিয়েছিলেন। গত তিন মেয়াদে সেখানে নৌকার প্রার্থী ছিলেন হাবিবর রহমান। এবার মজনুকে আবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আগে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন, মাঝে বিরতি দিয়ে আবারও নৌকা পেলেন এমন প্রার্থীদের মধ্যে আরো আছেন নীলফামারী-৩ আসনে মো. গোলাম মোস্তফা, রংপুর-১ আসনে রেজাউল করিম রাজু, কুড়িগ্রাম-২ জাফর আলী, গাইবান্ধা-৪ আসনে আবুল কালাম আজাদ, খুলনা-১ আসনে ননি গোপাল মণ্ডল, বরিশাল-২ আসনে তালুকার মোহাম্মদ ইউনুস, টাঙ্গাইল-৮ আসনে অনুপম শাহজাহান জয়।
ঢাকা-৪ আসনে সানজিদা খানম, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আব্দুল্লাহ আল কায়সার, সিলেট-২ আসনে শফিকুর রহমান চৌধুরী, নোয়াখালী-৬ আসনে মোহাম্মদ আলী এবার নৌকার টিকেট পেয়েছেন, যারা আগেও আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন।
বগুড়া-৭ আসনে মো. মোস্তফা আলম উপ নির্বাচনে মনোয়ন পেয়ে হেরেছিলেন। আর চট্টগ্রাম-৫ আসনে মো. আব্দুস সালাম ১৯৯৬ এ মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হন। এবার তাদের আবারও নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে।