Published : 06 May 2025, 06:02 PM
লন্ডনে চিকিৎসার পর ‘শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ’ আছেন খালেদা জিয়া।
মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে এক ব্রিফিঙে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, “উনি অনেকটা শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে লন্ডন থেকে ফেরত এসেছেন।
“চিকিৎসা পরবর্তিতে উনার শারীরিক অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ… অনেকটুকু উনি সুস্থ আছেন। মানসিকভাবেও উনি স্ট্যাবল আছেন।”
“তবে ১৪ ঘণ্টার (বিমান) জার্নি এবং রাস্তার এই জার্নির কারণে উনি শারীরিকভাবে একটু অবসন্ন। তারপরও মানসিকভাবে উনার অবস্থা অত্যন্ত স্থিতিশীল আছে,” বলেন অধ্যাপক জাহিদ।
খালেদা জিয়ার এই সুস্থতা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি।
লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে চার মাস পর মঙ্গলবার সকালে দেশে ফেরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। সেখানে থেকে গাড়িতে করে তার গুলশানের বাসা ফিরোজায় আসতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।
বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত সড়কে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহরকে এগোতে হয় ধীর গতিতে। এক পর্যায়ে নির্ধারিত পথ বদলে নিরাপত্তা বাহিনী তাকে নিয়ে ফিরোজায় পৌঁছায় বেলা দেড়টায়।
ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে একদিন কম চার মাস ছিলেন। লন্ডন ক্লিনিকে তার চিকিৎসা হয়েছে। লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ১৭ দিন ক্লিনিকে থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান তিনি।
লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিমান কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের প্রতি খালেদা জিয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথাও জানান জাহিদ।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিমান বন্দর থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে আসতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গণমাধ্যমের সংবাদ কর্মীরা যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেজন্য তাদের প্রতি দলের চেয়ারপারসন এবং দলের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
ড. জাহিদ বলেন, “লন্ডনে জ্যেষ্ঠপুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ৭ জানুয়ারি উনাকে রিসিভ করা থেকে শুরু করে গতকাল ৫ মে পর্যন্ত উনার লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এবং উনার বাসায় পরিবারের সকল সদস্যদের তত্ত্বাবধানে, বিশেষ করে উনার তিন নাতনির কথা বলতেই হয়… ব্যারিস্টার জায়মা রহমান, জাফিয়া রহমান, জাহিয়া রহমান, তারা সব সময় তাদের দাদু অর্থাৎ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে প্রশান্তি দিতে যে দায়িত্ব পালন করেছেন সেজন্য আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে তারেক রহমানসহ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
“একইসঙ্গে ইউকে বিএনপির এমএ মালেক, কয়ছর এম আহমেদসহ সকল প্রবাসী বিএনপির নেতাকর্মী এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দলের প্রবাসী নেতাকর্মীরা বিএনপি চেয়ারপারসেনের চিকিৎসার জন্য যে সহযোগিতা করেছেন এবং দেশবাসী সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন সেজন্য দেশনেত্রী সবার কাছে তার কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আল্লাহর কাছে আমরা শুকরিয়া জানাই তার রহমতে দেশনেত্রী অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসতে পেরেছেন।”
ব্রিফিঙে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নুর উদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন, বিএনপির আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শাম্মী আখতার, নিলোফার চৌধুরী মনি, সাইফ আলী খান, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার, জাহিদুল ইসলাম রনি, আবদুল মোনায়েম মুন্না, এসএম জিলানী, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।