এজন্য সবার পরামর্শ নেওয়া ও আলোচনা করার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
Published : 16 Jan 2025, 08:56 PM
জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে গিয়ে যাতে রাজনৈতিক দলের ঐক্যের মাঝে ‘ফাটল’ না ধরে সেদিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ এসেছে বিএনপির তরফে।
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে দলের এমন অবস্থান তুলে ধরার কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “যাতে এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে সেখানে কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয় সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।“
বৃহস্পতিবার বিকাল সোয়া ৪টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সর্বদলীয় এ বৈঠক হয়, যাতে বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ২৭ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকে দলগুলোর কাছে পাঠানো ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে আলোচনা হয়। শুরুতে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বৈঠক শেষ হয়।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বৈঠক শেষে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ঘোষণাপত্র নিয়ে দলটির তরফে কী পরামর্শ ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা প্রশ্ন করেছি যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র আসলেই সাড়ে ৫ মাস পরে কোনো প্রয়োজন ছিল কি না?
”যদি থেকে থাকে সেটার রাজনৈতিক গুরুত্ব, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আইনি গুরুত্ব কী? সেগুলো নির্ধারণ করতে হবে। যাতে এই ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে সেখানে কোনো ফাটল সৃষ্টি না হয় সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।“
এজন্য সবার পরামর্শ নেওয়া ও আলোচনা করার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “যদি কোনো রাজনৈতিক দলিল ঐতিহাসিক দলিলে পরিণত হয় সে দলিলটাকে আমরা অবশ্যই সম্মান করি। কিন্তু সেটা প্রণয়ন করতে যেয়ে যাতে সব সংশ্লিষ্ট সকল দলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়, আলোচনা করা হয়, সেদিকটায় আমরা পরামর্শ দিয়েছি।”
এসময় বিএনপির এই নেতা বলেন, “এবং সে বিষয়ে আমি প্রধান উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি, সে বিষয়ে যেন আপনারা নজর রাখেন, এবং সে হিসেবে পদক্ষেপ নেন। যাতে জাতীয় ঐক্যের মধ্যে কোনরকমের ফাটল সৃষ্টি না হয়। আমাদের মধ্যে যাতে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।“
সরকারের পক্ষ থেকে পাঠানো খসড়া নিয়ে দলটির কোনো আপত্তি ছিল কি না জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা কোনো বক্তব্য না দিয়ে ‘ধন্যবাদ’ বলে চলে যান।
তিনি এর আগে দেওয়া বক্তব্যেও জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে দলটির পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে বলে তুলে ধরেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, “এই মুহূর্তে যেটা জরুরি, ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যকে ধরে রাখা। এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে জাতীয় ঐক্য হয়েছে জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই জাতীয় ঐক্যকে গণ ঐক্যে রূপান্তরিত করে সেটাকে রাজনৈতিকভাবে যেন আমরা সংস্কৃতিক চর্চা করতে পারি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে নিয়ে আসতে পারি।
“এবং সে ঐক্যকে ধরে রেখে জাতীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেটাই এখন আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।”
তার ভাষ্য, “আমাদের সেই প্রচেষ্টার কারণে আমরা এই সকল রাজনৈতিক দল যারা এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন, সংগ্রামে ছিল এবং আমাদের সাথে ছিল তাদের সবাইকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক যেকোন বক্তব্য আমরা দিতে চাই।
“এখন যেকোন রকমের অনৈক্যের বীজ আমাদের ভেতর বপন করনে না পারে কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং ফ্যাসিবাদের দোসররা সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।”
বিএনপি ছাড়াও এতে ছিলেন জামায়াতে ইসলামী, গণ সংহতি আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, গণ অধিকার পরিষদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গণ ফ্রন্ট, বাসদ (মার্কসবাদী), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এবি পার্টি , খেলাফত আন্দোলন, জেএসডি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং নেজামে ইসলামীর প্রতিনিধিরা।