“তাদের মুখে যখন বড় বড় কথা শুনি তখন অবাকই লাগে”, বলেন তিনি।
Published : 06 Aug 2023, 10:52 PM
ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে যে অপ্রপ্রচার-গুজব হচ্ছে তাতে দেশের মানুষকে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি নেতাকর্মীদের এর উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য এবং সরকারের উন্নয়নের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।
রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সমাপনী বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ের প্রায় তিন হাজার নেতা এবং জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে এ বিশেষ বর্ধিত সভা করেন তিনি।
এমন অপ্রচারের পেছনের থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, "আমি জানি আমাদের বিরুদ্ধে অনেকে অপপ্রচার চালায় আর অপপ্রচার চালায় কারা?
“যারা ভোট চুরির মধ্য দিয়ে, যাদের জন্ম হয়েছে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে, সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে। যেটা আমাদের কথা না, উচ্চ আদালত যেটা ঘোষণা দিয়েছিল- জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখল সম্পূর্ণ অবৈধ।"
তিনি বলেন, "এখন থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া তাদের কিছু দোসর আছে। আর কিছু লোক আছে যারা এখানে বিভিন্ন অপরাধ করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। সেখান থেকে টাকা পায় কোথায়? সেটাই প্রশ্ন। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এর মাধ্যমেই তারা অপপ্রচার চালায়।
"কাজেই এই গুজবে কান না দেওয়া, অপপ্রচারে কান না দেওয়া, তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সেই সাথে সাথে আমাদের উন্নয়নের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা যদি মানুষের কাছে যান আর যদি বলেন আপনাদের জন্য এই কাজ করেছি- ভবিষ্যতে এটা করা হবে তাহলে অবশ্যই মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে, নৌকা মার্কায় ভোট দিবে।"
শেখ হাসিনা বলেন, "সামনে আমাদের নির্বাচন, এ ব্যাপারে এখন থেকেই সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণ। জনগণের শক্তিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি। কারণ আওয়ামী লীগ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কোনো দিন কারও কাছে মাথা নত করেনি। নিজের জীবনকে কবুল করে তিনি এই দেশের মানুষের মুক্তি এনে দিয়েছেন। আমরা তারই আদর্শের অনুসারী। আমরা কারও কাছে মাথা বিকাই না, মাথা নত করি না।
উন্নয়নবার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিন, নেতা-কর্মীদের শেখ হাসিনার নির্দেশ
তিনি বলেন, "আর তাদের মুখে যখন বড় বড় কথা শুনি তখন অবাকই লাগে। তারা নাকি অনেক কিছু করবে, ক্ষমতায় তো ছিল- লুটপাট করেছে, মানিলন্ডারিং করেছে, পাচার করেছে। নিজেদের ভাগ্য তারা গড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য তারা গড়েনি। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়া হয়েছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখনই।
"একটা কথা মনে রাখতে হবে ২০১৪ নির্বাচন ঠেকাতে এই বিএনপি ৫২৫টির মত স্কুল পুড়িয়েছিল, ৩২৫টি গাড়ি পুড়িয়েছিল, বাস-ট্রাক, প্রাইভেট কার, ২৯টি লঞ্চ, ৭০টি সরকারি অফিস, ছয়টি ভূমি অফিস, তিন হাজার মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, পাঁচশত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ওই বিএনপি জামায়াত জোট, সেই পোড়া মানুষগুলো এখনও আছে, তাদের কী অপরাধ ছিল?"
মানুষ পুড়িয়ে আর বাসে আগুন দিয়ে সরকার পতন হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, "সাধারণ মানুষ বাসে যাচ্ছে, তাদের পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, এটা কী এটা তাদের আন্দোলন, তাদের আন্দোলন মানুষকে পুড়িয়ে মারা, মানুষের জন্য কাজ করা না। তারা ভাবছে, মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়ালে, গাছ কাটলে আর বাসে আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। সরকার এত কাঁচা না, আওয়ামী লীগের শিকড় প্রথিত এই মাটিতে।
"কাজেই আওয়ামী লীগ সংগঠন এই দেশের মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসেছে। সেখান থেকে আমরা কাজ করি মানুষের জন্য কারণ মানুষের বিশ্বাস আস্থা আছে।"
তিনি বলেন, "কিছু দিন আগে আমাদের হুমকি দিল- ১০ ডিসেম্বর না কি সরকার উৎখাত করবে। কী করতে পেরেছে? কিছু করতে পেরেছে, কেন পারেনি, কারণ মানুষের সমর্থন পায়নি। কিন্তু খালেদা জিয়া ভোট চুরি করার পর আমরা কিন্তু উৎখাত করেছি। সেটা মাথায় আছে, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আর ২০০৬ সালে সেটাও তো নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোট সেটাও কিন্তু করতে পারেনি। উৎখাত হতে হয়েছে। চোরের মায়ের বড় গলা, বড় বড় কথা বলে বিএনপি।
"ঘর দিয়েছি, সেখানে কে বিএনপি কে আওয়ামী লীগ, কে কোন পার্টি করে আমরা কিন্তু তা দেখিনি। সেখানে কে ভূমিহীন আমরা কিন্তু সেটাই দেখেছি। ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছি। দল মত সেটা তাদের ইচ্ছা, আমি যখন কাজ করেছি দেশের মানুষের জন্য করেছি। আমাদের উন্নয়নটা সমগ্র বাংলাদেশে সেখানে কোন অঞ্চলে ভোট পেয়েছি, কোন অঞ্চলে ভোট পাইনি, সেটা দেখিনি। বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকবে উন্নত জীবন পাবে, জাতির পিতা যেমন চেয়েছিল সেটাই।"
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্ব আছে, যেটুকু আমরা করি, সেটুকু মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি ছিল আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ সরকার গঠন করেছে বলেই, এই সাড়ে ১৪ বছর বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস জ্বালাও-পোড়াও, অবরোধ কর্মসূচি অনেক কিছুই তারা করেছে। কিন্তু জনগণের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে বলেই, আওয়ামী লীগ সংগঠন অনেক শক্তিশালী সংগঠন বলেই, তাদের কোনো আন্দোলন ক্ষতি করতে পারেনি বরং তারাই ধীরে ধীরে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
"আজকে সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত, আর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতি-মানিলন্ডারিং এবং অবৈধ সম্পদের জন্য সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া। লন্ডনে থাকা তারেক জিয়া এবং তার বউও সাজা পেয়েছে, এই মামলা তো আওয়ামী লীগ করে নাই। এই মামলা তো খালেদা জিয়ার প্রিয় ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দিন, মইনউদ্দিরাই করেছে। সেই মামলা চলতে চলতে এত বছরে রায় বেরুচ্ছে।"