আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভোটের তারিখ জানিয়ে তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের ট্রেন কারও জন্য অপেক্ষা করবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে বিএনপির ভোট বর্জনের ঘোষণার প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা ‘নির্বাচনী ট্রেনে’ না উঠলে কিছু করার নেই।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে ৭ জানুয়ারি ভোট ও ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় জানিয়ে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে আন্দোলনে থাকা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এর পরপর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘ঘোষিত তফসিলে কোনো নির্বাচন হবে না।
তবে আওয়ামী লীগ তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি মিছিল করেছে জেলায় জেলায়। সেখানে স্লোগান দেওয়া হয় ‘৭ জানুয়ারি সারা দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’।
২০১৩ সালেও দুই প্রধান দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যে নির্বাচন হয় বিএনপি ও তার মিত্রদের ছাড়াই। তাদের অবরোধ ও হরতালে ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে ভোট করে ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।
সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্মেলনে এসে ওবায়দুল কাদের বলেন, “তারা (বিএনপি) না উঠলে (ভোটে না এলে) আমরা কী করব? নির্বাচনের ট্রেন কারো জন্য অপেক্ষা করবে না। নির্বাচনে ট্রেনে আপনি উঠবেন না, আপনি না উঠলে ট্রেন কি থেমে থাকবে?”
নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন হতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে যাচ্ছে। এর বিকল্প কী করার আছে?”
গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ‘চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নকে’ ত্বরান্বিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী সময় মত নির্বাচন হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা দেশের সব ভোটারকে বলব, স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশ নিয়ে এই নির্বাচনে ভোট প্রদান করবেন।”
এবারের নির্বাচনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত ব্যাপার। তবে জাতীয় পার্টির সম্পর্কে শেষ বিষয়টা শুনতে একটু সময় অপেক্ষা করেন, বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ভেতরে অনেক খবর আছে।”
তফসিল ঘোষণার আগে আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিন প্রধান দলকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, “সিইসির বক্তব্য এবং ডনাল্ড লুর চিঠি… এই দুটি বিষয়ে আলাদা। নির্বাচনের জন্য সংলাপ করতে হবে, এই কথা ইসির বক্তব্যে নেই। আর এটা থাকারও কথা না।”
সকালে এক আলোচনায় সংলাপ নাকচ করে বক্তব্য রাখলেও সন্ধ্যায় তিনি বলেন উল্টো কথা। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় সংলাপ অপরিহার্য। সংলাপের বাস্তবতাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না।
“বিএনপির সঙ্গে দুইবার সংলাপ হয়েছে। সংলাপ করিনি, তা তো নয়। এবারও তো প্রেসিডেন্ট ডেকেছিলেন, তারা আসেনি, নির্বাচন কমিশন ডেকেছে, তারা আসেনি। সংলাপ এক পক্ষ চাইলে হবে না, সবাইকে চাইতে হবে।”
আনন্দের দিন
গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসনের অংশ হিসেবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে মন্তব্য করে কাদের বলেন, “গণতন্ত্র রক্ষাকারী বাঙালির জন্য আজকের দিনটি খুব আনন্দের একটি ঐতিহাসিক দিন।
“এর মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন পূরণ হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানাই।”
আগামী শুক্রবার আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “মনোনয়নপত্র ফরম বিক্রি হবে একই সময়ে।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম; সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আইন বিষয়ক সম্পাদক নাজিবুল্লাহ হিরু, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুল ইসলাম, মারুফা আক্তার পপিও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।