যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে ‘অনেক ভালো কথা’, তাই পুরো প্রত্যাখ্যান নয়: তথ্যমন্ত্রী

“অবশ্যই পুরো প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি না। কারণ, সেখানে অনেক ভালো কথাও বলা আছে। তবে সার্বিকভাবে আমাদের মানবাধিকার, নির্বাচন, গণতন্ত্র সংক্রান্ত যে সমস্ত বিষয়াদি আছে সেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 March 2023, 12:26 PM
Updated : 22 March 2023, 12:26 PM

‘অনেক ভালো ভালো কথা থাকায়’ যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন সরকার পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে না বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তবে বাংলাদেশে নির্বাচন ও মানবাধিকার বিষয়ে সেই প্রতিবেদনের কিছু মন্তব্যকে ‘একপেশে’ বলেছেন তিনি। অভিযোগ করেছেন, ‘সরকারবিরোধী ও পক্ষপাতদুষ্ট সূত্র’ থেকে তথ্য নিয়ে সেসব লেখা হয়েছে।

বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্স ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “অবশ্যই পুরো প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি না। কারণ, সেখানে অনেক ভালো কথাও বলা আছে। তবে সার্বিকভাবে আমাদের মানবাধিকার, নির্বাচন, গণতন্ত্র সংক্রান্ত যে সমস্ত বিষয়াদি আছে সেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট।”

মন্ত্রী বলেন, “সরকারিবিরোধী এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে। সুতরাং সেই প্রতিবেদনটা একপেশে।”

অবশ্য প্রতিবেদনে ‘অনেক ভালো কী কথা’ আছে, তা নিয়ে কিছু বলেননি হাছান মাহমুদ।

বিশ্বের ২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই প্রতিবেদন সোমবার প্রকাশ করা হয়।

বাংলাদেশে মানবাধিকারের বিচারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, “বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার গঠন হয়, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষমতা ন্যস্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে।”

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “ব্যালটে নিয়ম বহির্ভূত সিলমারা এবং বিরোধী এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অনিয়ম এমন সব অভিযোগের কারণে ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে অবাধ ও স্বচ্ছ হিসাবে বিবেচিত হয়নি।”

২০২২ সালে বাংলাদেশে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের বাধা, সভা-সমাবেশে বলপ্রয়োগ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানকে বাধা’ প্রভৃতি অন্যান্য সময়ের মত অব্যাহত ছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে।

‘প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়েও আছে’

হাছান মাহমুদ বলেন, “ডনাল্ড ট্রাম্প (আমেরিকায় গত নির্বাচনে পরাজিত সাবেক প্রেসিডেন্ট) তো এখনও নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেননি। সেটির প্রেক্ষিতে ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যেভাবে ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়েছে, সে ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা তো আমাদের দেশে কখনও ঘটে নাই।

“সুতরাং নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে তাদের নিজেদের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে যে প্রশ্নগুলো আছে বা তাদের নির্বাচন হওয়ার পর ক্যাপিটল হিলে যে হামলা, সেই বিষয়গুলোর দিকে তাদের তাকানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।”

ভবিষ্যতে অন্য কোনো বড় দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বা নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন দেয় কি না, সেটি দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকার কথাও বলেন তথ্যমন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘নৈতিক অধিকার’ নিয়ে প্রশ্ন

এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ৭ হাজার ৬৬৬ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ২০২০ সালে সংখ্যাটি ছিল ৯৯৬ জন, ২০২১-২০২২ সালে বেড়ে হয়েছে গড়ে প্রায় ১ হাজার।

“যে দেশে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়, সেখানে অন্য দেশকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার নৈতিক অধিকার কতটুকু আছে, সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন।

“আমাদের দেশে যে কখনো এমন হয় না আমি সেটি বলছি না। কিন্তু সেগুলোর তদন্ত হয় এবং তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিও বিধান করা হয়।”

বৈঠকে কী কথা

বৈঠকে সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশন এবং ফেডারেল ইউনিয়ন অব নিউজপেপার প্রেস ওয়ার্কার্সের সভাপতি সংগঠন দুটির সদস্যদের কর্মক্ষেত্রের নানা বিষয় উত্থাপন করেন মন্ত্রীর কাছে।

সংবাদপত্র কর্মচারী ও নিউজপেপার প্রেস শ্রমিকদের জন্য করোনাকালীন সহায়তা, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, কল্যাণ ফান্ড গঠনসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরে মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন তারা।

মন্ত্রী বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ‘সুবিবেচনার’ আশ্বাস দেন।