বিদ্যুৎ পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার তাগিদ ১৪ দলের

"প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব রকম চেষ্টা করছেন। আমাদের দেখতে হবে সরকার সচেতন কি না, প্রচেষ্টা আছে কি না,” জোটের বৈঠক শেষে বলেন সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 01:02 PM
Updated : 4 June 2023, 01:02 PM

তীব্র গরমে লোডশেডিং ফিরে আসায় মানুষের তীব্র ক্ষোভের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ‘দ্রুত স্বাভাবিক করতে’ উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ১৪ দলের তরফে।

বিষয়টি নিয়ে সরকারের ‘সচেতন তাগিদ’ আছে কি না, সে বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। 

রোববার ইস্কাটনে জোটের বৈঠক শেষে এই তাগিদ দেন জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে আলোচনা হয়। 

এতে উঠে আসে বিদ্যুৎ পরিস্থিতিও, যা জ্বালানি সংকটের কারণে বর্তমানে নাজুক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাত নিয়ে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়। এক যুগের বেশি সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে চার গুণ হয়েছে, উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে পাঁচ গুণ। দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় আসাকে সরকার তাদের বড় সাফল্য হিসেবেও প্রচার করে। 

বিদ্যুৎ নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে থাকা সরকার ধাক্কা খায় গত বছরের শেষ দিকে। ইউক্রেই যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিকল্পনা করে উৎপাদন কমানোর ঘোষণা আছে। দুই মাস ভোগান্তির পর শীতকাল ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতি সরকারের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে। 

তবে মজুদ ফুরিয়ে আসার পরও ডলার সংকটে কয়লা আমদানি নিয়ে অনিশ্চয়তা, জ্বালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহের অভাবে আবার ফিরে এসেছে দেড় দশক আগের লোডশেডিংয়ের স্মৃতি। সরকারের হিসাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘাটতি আড়াই হাজার মেগাওয়াট। তবে রাজধানী ঢাকাতেই দিনে রাতে বিদ্যুৎ যাচ্ছে বারবার। মফস্বল ও গ্রামের পরিস্থিতি আরও খারাপ। 

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন ‘অসহনীয়’ লোডশেডিং থেকে মুক্ত হতে হতে আরও দুই সপ্তাহ লেগে যাবে। 

আমির হোসেন আমু বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব রকম চেষ্টা করছেন। আমাদের দেখতে হবে সরকার সচেতন কি না, প্রচেষ্টা আছে কি না। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে থাকলে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। 

"বিএনপির সময় দেশে ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। আমরা বিদ্যুৎ সমস্যা পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।" 

নিত্যপণ্যের দাম নিয়েও উদ্বেগ 

নিত্যপণ্যের দরের ঊর্ধ্বগতি নিয়েও ১৪ দলের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বাজার পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে জোটের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও জানান আমু। 

আগামী অর্থবছরের বাজেটে কাগজ ও কলমের ওপর কর বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটিও পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছে ক্ষমতাসীন জোট। 

আমু বলেন, "আমরা পড়াশোনায় গুরুত্ব দিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা পয়সায় বই বিতরণ করছেন। সবকিছু ঠিক আছে। সেইক্ষেত্রে কলম ও কাগজের দাম বৃদ্ধি পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। সংবাদপত্রের উপর ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমরা মনে করি কাগজ-কলমের দাম কমানো উচিত। আরোপিত কর প্রত্যাহার করা উচিত।" 

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে ‘দুরভিসন্ধি’, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নয় 

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা এলে তার জন্য দায়ী ও তার পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না বলে যে নীতি ঘোষণা করেছে, তাতে ‘দুরভিসন্ধি’ দেখতে পারার কথাও জানায় ১৪ দল। 

দীর্ঘ আলোচনার পর আমু বলেন, “মার্কিন ভিসানীতি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনাহূতভাবে আসায় তা অত্যন্ত দুরভিসন্ধিমূলক মনে হচ্ছে। এটা কারও কারও পক্ষে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

“কিন্তু আমরা মনে করি, জাতি সংবিধানের প্রত্যেকটি প্রক্রিয়াকে সম্মুন্নত রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকবে। আমরা একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এক্ষেত্রে অন্য কোনো হস্তক্ষেপ আমরা কামনা করি না।" 

আপনারা ভিসানীতির সমালোচনা করছেন, কিন্তু আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন- তাদের টার্গেট করে এটা করা হয়নি, এমন মন্তব্যের জবাবে আমু বলেন, “আমরা ভিসানীতিকে অনাকাঙ্ক্ষিত মনে করি। আরেকটা কথা হল এটাতো ১৪ দল, আওয়ামী লীগের মিটিং না। 

“মনে রাখবেন- আমরা তো রাবার স্ট্যাম্প না। এখানে আরও ১৩টা দল আছে, সবাইতো আওয়ামী লীগ না, এটা আপনাকে মনে রাখতে হবে। 

“এখানে কথাটা হচ্ছে ১৪ দল যেটা ফিল করে, সেটাই বলবে। অন্যদল কে কী বলবে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের আলোচনায় যেটা আসবে, সেটা আমরা প্রকাশ করব। আমরা মনে করি, যারা নির্বাচনকে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বানচাল করতে চায়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের জন্য এটা (ভিসানীতি) সহায়ক হতে পারে। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কথাগুলো বলতে চাই।” 

নির্বাচন হতে হবে সংবিধান মেনে 

বিরোধীদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সরাসরি বক্তব্য না দিলেও কার্যত সে দাবি মেনে না নেওয়ার অবস্থানও জানিয়েছেন ১৪ দলের মুখপাত্র। 

তিনি বলেন, “সংবিধানের ভিত্তিতে নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হতে হবে, দেশে এ ধারাটা অব্যাহত রাখার জন্য। সংবিধানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, অন্য কোনো উপায়ে আঘাত আসুক- এটা আমরা চাই না। 

"এখানে যদি অন্য কোনো দেশের সন্দেহ থাকে, তাহলে তারা বসে এটা ঠিক করতে পারে যে, সংবিধানের ভেতরে কোথায় কোন ফাঁকফোকর আছে, সেটা তারা বিবেচনা করুক। সেগুলো দেখুক, আলোচনা করুক।” 

ভোটে সব দলের অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে ১৪ দল কোনো আলোচনার উদ্যোগ নেবে কি না, এমন প্রশ্নে আমু বলেন, "আমরা মনে করি, এ জাতি সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো দলই জাতির বাইরে না, জনগণের বাইরে না, দেশের বাইরে না।

 “…সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই। কোনো দলের পক্ষে জনস্রোত থাকলে এই স্রোতের বাইরে প্রশাসনও যেতে পারে না। সেই দিকেই নির্বাচন ধাবিত হয়।" 

আগামী ৬ জুন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ১৪ দল জনসভা করবে বলেও জানান আমু। বলেন, “সেখানে জাতির উদ্দেশে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করব। ধারাবাহিক কর্মসূচির বিষয়ে জোট পরে আলোচনা করে ঠিক করবে।” 

বৈঠকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি-জেপির (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনও অংশ নেন।