“আঞ্জুয়ারা রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগ চায়নি, সে শুধুমাত্র স্বামী সন্তান নিয়ে একটু সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার দাবি করেছিল। এ জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে।”
Published : 12 Nov 2023, 07:57 PM
সরকার তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসা অন্য দেশের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রোববার বিকালে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘‘সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে দেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় খাত পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীল-নকশা বাস্তবায়ন করছে। তিনি (শেখ হাসিনা) পুনরায় ১৯৭৪ এর মতো দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে চান, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে চান।”
সরকারের প্ররোচনায় পোশাক খাতের ১৫০টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে তিনি পোশাক শ্রমিকদের দাবিকে ‘ন্যায্য’ আখ্যা দেন।
পাঁচ বছর পরপর তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নতুন যে মজুরি ঘোষণা হয়, তাতে এবার সর্বনিম্ন মজুরি ঠিক হয়েছে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। তবে শ্রমিকদের কেউ ২৩ হাজার, কেউ ২৫ হাজার টাকা দাবি করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিজিএমইএর হিসাবে ২৫টি কারখানায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এরপর ১৩০টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে আমেরিকান ক্রেতাদের জোট বাংলাদেশের পোশাকের জন্য বাড়তি দাম দিতে রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে বিজিএমইএ বলছে, এমন ঘোষণা আগেও এসেছে। আগে বাড়তি দাম দিক, তারপর এখান থেকে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে তারা ভাববে।
রিজভী বলেন, “গোটা অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। জনগণ বিশ্বাস করে এখন রেডিমেন্ট গার্মেন্টস ব্যবসা অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়ে অবৈধ ক্ষমতার থাকার গ্যারান্টি চান ‘অবৈধ সরকারের’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী শুধু নয়, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কর্মজীবী এমনকি গার্মেন্টস শ্রমিকরা পর্যন্ত এই ফ্যাসিস্টদের কাছে নিরাপদ নয়। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে।”
গাজীপুরে পোশাক কর্মী নিহতের কথা তুলে ধরে রিজভী বলেন, “আঞ্জুয়ারা রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগ চায়নি, সে শুধুমাত্র স্বামী সন্তান নিয়ে একটু সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার দাবি করেছিল। এ জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে।”
‘আবার গুম শুরু হয়েছে’
রিজভী বলেন, ‘‘নব্য নাৎসী কায়দায় সরকার ‘অতীতের মতো’ আবার নতুন করে ‘গুমের উৎসব’ শুরু করেছে।…শেখ হাসিনার ‘গুম বাহিনীর’ ভয় দেখিয়ে মায়েরা তাদের বাচ্চাদের এখন ঘুম পাড়াচ্ছে।”
বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের না পেলে তাদের বাবা-মা, ছেলে, ভাই-বোন এবং আত্মীয় স্বজনদেরও ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। বলেন, “ধরে নিয়ে অদৃশ্য করে রাখছে, তুলে নিয়ে গিয়ে অস্বীকার করা হচ্ছে।
‘‘কোথাও কোথাও জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের মতো জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করছে এই নামধারী আওয়ামী পুলিশ লীগ। কোথাও কোথাও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের না পেয়ে বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিয়েছে তারা।”
রিজপুলিশ দলীয় কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, “পুলিশের মর্যাদাপূর্ণ ইউনিফর্ম খুলে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজপথে নামুন। দুঃশাসনে পিস্ট প্রতিবাদী মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে দলীয় ও অবৈধ রাষ্ট্রশক্তির হয়ে বেপরোয়া আচরষণ করবেন না। আপনারা কে কী করছেন বাংলাদেশের জনগণ সব হিসাব রাখছে। গণঅভ্যুত্থানে আপনাদেরও পরিণতি কী হবে তা জনগষ নির্ধারণ করে রাখছে।”
চারিদিকে শুধু ‘জমাট বাঁধা কান্নার পাহাড়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রতিদিনই সেই কান্নার পাহাড় আরো উঁচু হচ্ছে। ১৫ বছর ধরে সেই কান্নার পাহাড় থেকে চুইয়ে নামছে আর্তনাদ। আর গল গল করে উঠছে ক্রসফায়ারে মরা লোকদের আর গুম হওয়া মানুষের অভিশাপ।
“রাতে-দিনে তারা (সাদা পোশাকধারীরা) কালো কাঁচ ঢাকা মাইক্রোবাসে নাৎসী বাহিনীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে গণতন্ত্রকামীদের।”
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপির ৩৬৫ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মামলায় ১ হাজার ৪৮৫ জনের অধিক নেতা-কর্মী।