প্রধানমন্ত্রী তো ‘টুস করে’ ফেলে দিতে চেয়েছিলেন: রিজভী

“তো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যে টুস করে পদ্মাসেতু থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে…। এটার ব্যাপারে উনাদের বক্তব্য আমরা শুনি, ওবায়দুল কাদের বলুন।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2023, 12:29 PM
Updated : 24 May 2023, 12:29 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহী জেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা ও আলোচনার মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পুরনো বক্তব্যের প্রসঙ্গ টানলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে রাজশাহী বিএনপির ওই নেতার বক্তব্যকে ‘স্লিপ অপ টাং’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, “জেলা পর্যায়ের একজন নেতা বলেছেন। আমরা তো গতকালই বলেছি এরকম ‘স্লিপ অব টাং‘ হয়, পলিটিক্যাল রেটোরিক থাকে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।

“গতকালও উনি (ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, ঠাণ্ডা মাথায় বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা হবে। এটাও তো এক ধরনের হত্যার হুমকি, ব্যক্তিগত আক্রমণের হুমকি। ড. মুহাম্মদ ইউনুস কি বাংলাদেশের জন্য সন্মান বয়ে আনেননি। তাকে যে বলা হল ‘চুবিয়ে (পদ্মা নদীতে) দেওয়া হবে’… এটাও তো একটা ব্যক্তিগত হত্যা হুমকি। এগুলো নিয়ে আগে ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য শুনি।”

ঢাকার নয়া পল্টনে বুধবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন রিজভী। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকির প্রসঙ্গের পাশাপাশি বিরোধীদলের ওপর ‘হামলা’ ও মামলার কথা বলেন তিনি।

গত শুক্রবার বিকালে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর হাই স্কুল মাঠে এক জনসমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি দেন বলে আওয়ামী লীগ থেকে অভিযোগ উঠে।

এর প্রতিবাদে সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে ক্ষমতাসীন দলটি। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে বেশ কয়েকটি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার পরও বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতা এ নিয়ে কথা না বলায় তিনি বিস্মিত। তিনি প্রশ্ন রাখেন, "তাহলে কি এতে তাদের মৌন সম্মতি রয়েছে?"

বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “আমরা বলেছি, রাজনীতিতে নানা রেটোরিক থাকে। তো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যে টুস করে পদ্মাসেতু থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে…। এটার ব্যাপারে উনাদের বক্তব্য আমরা শুনি, ওবায়দুল কাদের বলুন।

“মাইনুদ্দিন খান বাদল (প্রয়াত সাংসদ) গুলি করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করার কথা বলেছিলেন…। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (সাবেক মন্ত্রী) ঘরে ঘরে হত্যা করার কথা বলেছিলেন…। এগুলোর ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলুক। রাজনীতিতে রেটোরিক থাকে আমরা জানি। কিন্তু একে নিয়ে দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করা এটা তো শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ প্রধান ও সেই দলের নেতৃবৃন্দ।”

রাজশাহী জেলা বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদের প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, “আওয়ামী লীগ প্রধান তিনি একটি বড় দলের প্রধান নেতা। আর আবু সাইদ চাঁন তো একটা জেলা পর্যায়ের নেতা। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এই ধরনের কথা বেরোয়, তাহলে তৃণমূলের নেতারা কী শিখবে? তারাই যখন বিরোধী পক্ষকে ধবংস করা, ব্যক্তিগত পর্যায়ে হত্যা করা, পানিতে ডুবিয়ে মরার কথা বলতে পারেন…।”

‘জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না’

ক্ষমতাসীন দলের ‘উসকানিতে’ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপরে নতুন করে ‘হামলা ও মামলা’ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরের মত আবারও ভাওতাবাজী নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে মাফিয়া সরকার পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি করে দেশে নৈরাজ্য ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।

“সরকার যদি বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে দলীয় ক্যাডার ও পুলিশ দিয়ে হামলা এবং বাধা প্রদানের এই ধারা অব্যাহত রাখে, তাহলে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। এজন্য সৃষ্ট যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার সরকার বহন করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘বিএনপিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন’ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

Also Read: তাহলে কি বিএনপি নেতৃত্বের মৌন সম্মতি আছে? জানতে চান ওবায়দুল কাদের

“গতকাল মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে সেই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘বিএনপিকে ঠাণ্ডা মাথায় নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে… বিএনপির আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে হবে’। এই ধরনের বক্তব্যের পরও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

“ওবায়দুল কাদেরসহ তাদের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের এই ধরনের হুঙ্কারের পর বিএনপির ওপরে হামলা, মামলা ও আটকের অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ-র‌্যাব, সোয়াত বাহিনী।… তার হুমকি বাস্তবায়ন করছে আওয়ামী চেতনায় লালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার হুঙ্কারের মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ তার… চরিত্র বদলায়নি। তারা যে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার নিশ্চিহ্ন করেছে, সেটি ফিরিয়ে দিতে এখনও অনিচ্ছুক।”

ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতাকে ‘আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়’ মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মহাদুর্নীতি ও টাকা পাচার। জনগণের টাকায় তারা ফূর্তিবাজি করছে। এই কারণে তারা ক্ষমতা আকঁড়ে রাখতে চায়।

“জনগণ এই ফ্যাসিবাদী সরকার উৎখাতে রাস্তায় নেমে পড়েছে। হাটে-মাঠে-ঘাটে মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ, আন্দোলনে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বিএনপির তৃণমূলের শক্তি এখন সবচেয়ে জোরালো। রক্তপিপাসু মনোভাব পরিত্যাগ না করলে আওয়ামী লীগ চিরতরে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।”

ব্রিফিংয়ে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের হিসাব তুলে ধরে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, গত ১৯ মে থেকে বুধবার পর্যন্ত দলের ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মোট ১৪৮টি মামলা হয়েছে, ৬৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং আসামি করা হয়েছে ৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে।

‘নাইকো মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’

ষোল বছর আগে ২০১৭ সালে দায়ের করা নাইকো দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ার পারসন খালেদা জিয়াসহ আটজনের বিচার শুরু হয়েছে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে। মঙ্গলবার এ মামলায় সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা।

এই মামলাকে সরকারের ‘ভয়ঙ্কর নীল নকশার অংশ’ অ্যাখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, “এটি সরকারের অশুভ পরিকল্পনা। এই মামলায় আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা নিজেই, বর্তমান যিনি প্রধানমন্ত্রী, নিশিরাতে ভোটের প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলে নিয়ে আওয়ামী প্রধান এই মামলাসহ অনেক মামলা থেকে নিজের নাম বাদ দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বেগম খালেদা জিয়ার বিচার কার্যক্রম চালানোর ব্যবস্থা করেছেন, এই বিচার কার্য শুরু সম্পূর্ণরূপে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উগ্রতা ও প্রতিহিংসা।”

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সারফত আলী সপু, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, মহানগর দক্ষিন বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, আবদুস সাত্তার, তানভীর আহমেদ রবিন, লিটন মাহমুদ, হাজী মনির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।