নয়া পল্টন থেকে বেলা আড়াইটায় শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড় ঘুরে আবার নয়া পল্টনে এসে শেষ হয়।
Published : 16 Dec 2023, 04:27 PM
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫২তম বার্ষিকীতে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা করেছে বিএনপি। আর এই শোভাযাত্রাকে ঘিরে দেড় মাস পর নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে নয়াপল্টন এলাকা।
রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের হাতে হাতে ছিল লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা এবং দলীয় পতাকা।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নেতাকর্মীদের নয়া পল্টনের কার্যালয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল করে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে সংঘর্ষের কারণে মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকেই তালাবন্ধ নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ওই বন্ধ কার্যালয়ের সামনেই ছোট একটি ট্রাকের ওপরে অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপির নেতারা শোভাযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
নয়া পল্টন থেকে বেলা আড়াইটায় শুরু হওয়া শোভাযাত্রাটি কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড় ঘুরে আবার নয়া পল্টনে এসে শেষ হয়।
এই শোভাযাত্রায় ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, আফরোজা খানম রীতা, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবিব উ্ন নবী খান সোহেল, শিরিন সুলতানা, কায়সার কামাল, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, সেলিম রেজা হাবিব, রেহানা আক্তার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফী, নেওয়াজ হালিমা আরলি, রাশেদা বেগম হীরা, তাইফুল ইসলাম টিপু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, হায়দার আলী লেলিন, রফিক শিকদার,নিপুণ রায় চৌধুরী, আমিরুজ্জামান শিমুল, মোরতাজুল করীম বাদরু, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, তারিকুল আলম তেনজিং, খোন্দকার আকবর হোসেনসহ অঙ্গসংগঠনের আত্মগোপনে থাকা নেতারা ছিলেন।
‘ওরা বিজয় দিবসকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে’
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “১৬ ডিসেম্বর বিজয় হয়েছিল গণতন্ত্রের। সেই গণতন্ত্রকে হত্যা করে আজকে বিজয় দিবসকে আওয়ামী লীগ সরকার পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে।
“আসুন আজকে আমরা শপথ গ্রহণ করি, যারা বাংলাদেশকে লুটপাট করছে, যারা বাংলাদেশের আদর্শকে টেনে-হিঁচড়ে মেরেছে, যারা স্বাধীনতাকামী মানুষের গণতান্ত্রিক ভোটের অধিকার হরণ করেছে, যারা মামলা-হামলা দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে জেলের ভেতরে আটকিয়ে রেখেছে…সেই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নামি।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আমাদের মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, নেতাদের দণ্ডিত করা হচ্ছে। এসব কেন করা হচ্ছে? নির্বাচন নামে একটি খেলা করার জন্য।
“কিসের নির্বাচন বাংলাদেশে কোনো বিরোধী দল আজকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। যারা নির্বাচনী খেলায় যোগ দিয়েছে তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের প্রধান, তার পা ছুঁয়ে সালাম করে তার দোয়া নিয়ে নির্বাচনে নামতেছে।
সবাই জানতেছে, পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে কোন দল কয়টা আসন পাবে, কারা কোন এলাকা থেকে নির্বাচন করবে। এটা ভাবতে পারেন? এটা কি কোনো নির্বাচন, এটা কি কোনো ভোট?
তিনি বলেন, “এই রসিকতার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করি নাই, এই নির্বাচন নির্বাচন খেলার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি নাই। আমরা চাই, বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক। আর সেই গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে… জনগণ যাকে পছন্দ করবে তারা নির্বাচিত হবে, তারা সরকার গঠন করবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
আজকে সেই নির্বাচনের জন্য আমরা লড়াই করছি। এই লড়াই চলবে যতদিন না জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, “কোন দেশে আমরা আছি যে, একটা বিজয় র্যালি করতেও অপেক্ষায় থাকতে হয়। গত রাতে আমরা বিজয় দিবসের র্যালির অনুমতি পেয়েছি।
মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতিতে লাখো মানুষের সমাবেশ হয়েছে এই পল্টনে।
“এই পল্টনই হবে আগামী দিনের বিজয় চত্বর। আগামী দিনে আমরা এখানেই বিজয় অনুষ্ঠান করব।”
বিএনপির এই শোভাযাত্রায় মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, শ্রমিক দল, উলামা দল, ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, ড্যাব, এ্যাব, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটসহ ঢাকা জেলা, নরসিংদী জেলা বিএনপির সংগঠন ছিল।
শোভাযাত্রা উপলক্ষে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থানে।