“কোনো বিয়ে ঠিক হলেও তিন মাস আগে তারিখ হয়। আমি যদি জানতে পারি আপনারা এত মাস পরে নির্বাচন করবেন, আমাদের তো কাজ আছে”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 13 Oct 2024, 05:47 PM
জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবে কেবল সরকার পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোনো পরিস্থিতির বদল হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
‘মিথ্যা মামলা’র হয়রানি থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মুক্ত হচ্ছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি এ কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচন ৩৬ মাস পরে হলেও সময় ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতা। বলেছেন, বিয়ের তারিখও তিন মাস আগে ঠিক হয়। তাহলে নির্বাচনের কেন হবে না?
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুর্যোগ প্রশমন বিএনপির ভূমিকা’ বিষয়ে এক আলোচনায় গয়েশ্বর এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতা বলেন, “এক এগারোর সময়ে আওয়ামী লীগের নামে সব মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তাহলে এখন কেন আমাদের মামলা উঠছে না। আপনারাই (অন্তর্বর্তী সরকার) বলেছেন, আমাদের নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিল, এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপরে এত অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেন আপনাদের বিবেচনায় আসছে না?
‘‘আপনাদের (প্রধান উপদেষ্টা) মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথী হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি, তাহলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে আমাদের মামলাগুলো আগের মতই আছে, আমাদের আগের মতই আদালতে যেতে হচ্ছে। এই কারণেই আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি নেতা বলেন, “মান্না দের একটি গান, তুমি কি সেই আগের মতই আছ, নাকি অনেকখানি বদলে গেছ। গানের শুরুটা এরকম যদি বলি, ‘সরকার বদলিয়ে গেছে, তুমি আমি একই আছি, আগে যা ছিলাম’।”
গয়েশ্বরের ভাষ্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
“মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই। সব আগের মতই আছে।”
‘নির্বাচন হবে কি না কীভাবে বিশ্বাস করব?’
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দেবে, সে কথা কীভাবে বিশ্বাস করবেন, সেই প্রশ্নও রাখেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন নাই। কিন্তু জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। যেখানে এখনও নির্বাচন কমিশন নাই, সেখানে আমি কীভাবে বিশ্বাস করব আপনি নির্বাচন করবেন?”
নির্বাচনের তারিখও জানতে চান গয়েশ্বর। বলেন, “কতটুকু সময় লাগবে বলেন না কেন? সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন ১৮ মাস, পরের দিন কেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এটা সরকারের কথা না’।
“তাহলে সরকারের কথাটা কী? ৩৬ মাস, ৩০ মাস তাই বলেন না, বলতে তো হবে আপনাকে। কোনো বিয়ে ঠিক হলেও তিন মাস আগে তারিখ হয়। আমি যদি জানতে পারি আপনারা এত মাস পরে নির্বাচন করবেন আমাদের তো কাজ আছে, আমাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। সুতরাং আপনাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে।”
‘সংলাপ না, সময় নষ্ট’
রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গঠন করা কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইউনূসের সংলাপ নিয়েও কথা বলেন গয়েশ্বর। বলেন, “জাস্ট অ্যা টাইম কিলিং, নাথিং মোর।”
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যেটুকু সংস্কার দরকার হয়, সেটুকুই সংস্কারের জন্য বিবেচনা করবেন। আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি, এসব সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে। জনগণের প্রতিনিধিরা পার্লামেন্টে আসবে, তারা ঐক্যমতের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার করবে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে গয়েশ্বর বলেন, “জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে রাজনৈতিক দলের কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় নাই। একই ধারার আন্দোলন, কিন্তু বর্তমান সরকার তাদেরকে (ছাত্রদের) আলাদা করতে চান কেন?
“ছাত্ররাও কেন সচিবালয় ঘেরাও করব? কিছু থাকলে তারা সমাবেশ করে সরকারকে সতর্ক করবে।”
১৯৬২ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন জানিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, “তখন থেকেই রাজনীতি করছি। আমি বলব, তাই ছাত্রদের আলাদা করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। বৈষম্যবিরোধী যদি আরেকটা বৈষম্য সৃষ্টি হয় তার মাশুল কে দেবে?”
‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে‘আয়োজিত সেই আলোচনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির কর্মকাণ্ডের ওপরে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয়তাবাদী প্রচার দলের সহসভাপতি রুহুল আমিন।
সংগঠনের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হকও বক্তব্য রাখেন।