জানুয়ারিজুড়ে অবরোধের পর ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সপ্তাহের পাঁচ দিন হরতাল ডেকে বিএনপির পক্ষে বার্তা এলেও বরকতউল্লাহ বুলুর নামে আসা সর্বশেষ বিবৃতিতে স্বাধীনতা দিবসের আগের দিনের কর্মসূচিতে ব্যতিক্রম এসেছে।
Published : 24 Mar 2015, 06:37 PM
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির অংশগ্রহণের আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের নামে যে বিবৃতিটি এসেছে, তাতে ২৫ মার্চ বুধবার সারাদেশে গণমিছিলের কর্মসূচির ঘোষণা রয়েছে।
সেই সঙ্গে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য দলের সব পর্যায়ের নেতাদের আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
স্বাধীনতা দিবস কর্মসূচি ঘোষণা করে দুদিন আগে বিবৃতি এসেছিল বিএনপির। ২১ মার্চ বুলুর নামে আসা আরেক বিবৃতিতে ২৫ মার্চ বুধবার ভোর পর্যন্ত হরতালের বার্তা ছিল।
তবে নতুন বিবৃতিতে বুধবার সারাদেশে জেলা, থানা, পৌরসভা ও মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচির কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসে সাধারণ ছুটির আগের দিন কোনো হরতালের ঘোষণা থাকছে না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া লাগাতার অবরোধ ডাকার পর ২০ দলের পক্ষে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে হরতাল ডাকেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী গ্রেপ্তার হওয়ার পর আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের নামে প্রতি সপ্তাহের পাঁচ দিন হরতাল ডেকে দুই দফা বিবৃতি আসতে থাকে গণমাধ্যমে।
গত ১০ মার্চ সালাহ উদ্দিন ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর হরতালের বিবৃতি আসতে থাকে বুলুর নামে। তবে সালাহ উদ্দিনের মতো তিনিও বিবৃতি পাঠাচ্ছেন অজ্ঞাত স্থানে থেকে।
এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হওয়ার পর ১০ মার্চ ১২ ঘণ্টার জন্য হরতাল শিথিল করা হয়েছিল, তবে সেই বিবৃতিটি পাঠিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এরপর আবার হরতাল ডেকে বুলুর নামে বার্তা আসতে থাকলেও মঙ্গলবারেরটিতে হরতালের বদলে গণমিছিলের কথা বলা হয়েছে। তবে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
“সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিএনপির গুমকৃত যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের সকল গুমকৃত নেতা-কর্মীদেরকে তাদের পরিবারের নিকট সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া এবং সারাদেশে গুম, খুন, বন্দুকযুদ্ধের নামে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিত হত্যা, গণগ্রেপ্তার ও যৌথবাহিনীর নামে বিশেষ বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে চলমান অবরোধের পাশাপাশি আগামীকাল ২৫ মার্চ বুধবার দেশব্যাপী জেলা, থানা, পৌরসভা ও সকল মহানগরের থানায় থানায় ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।”
বিবৃতি পাঠিয়ে ডাকা হরতাল-অবরোধে এসএসসি পরীক্ষা পেছালেও সারাদেশে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম এবং অফিস-আদালত খোলাই থাকছে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে চলাচলও রয়েছে।
শুরুতে অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটতে থাকলেও আড়াই মাস পর তা অনেকটাই কমে এসেছে।
নির্দলীয় সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যানকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন, জনগণ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে হরতাল-অবরোধে এখন স্বাভাবিক সময়ের মতো যানজট দেখা যায় সড়কে।
স্বাধীনতা দিবসে বিএনপি কর্মসূচি দিলেও সরকার পতনের লক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করে নিজের কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়া বরাবরের মতো এবার সভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাচ্ছেন না বলেই ইঙ্গিত মিলেছে।
কর্মসূচির ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘জাতীয় নেতারা’ জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফুল দেবেন; আগের বছরগুলোতে বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ থাকত, যা এবার ছিল না।
এবার ভাষাশহীদ দিবসেও কার্যালয় ছাড়েননি খালেদা জিয়া। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার না যাওয়া নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে।
বিএনপির নেতাদের কথায় ইঙ্গিত মিলছে, খালেদা কার্যালয় থেকে থেকে একবার বের হলে সরকার পুনরায় তাকে ঢুকতে দেবে না বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।