এক এগারোর পর সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মৃত্যুপথযাত্রী মেয়েকে দেখতে প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানালে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ‘রাজনীতি ছাড়ার’ শর্ত দিয়েছিলেন উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।
Published : 14 Feb 2015, 08:41 PM
শনিবার চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে রচিত বই ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান তার স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন।
তিনি বলেন, “এক এগারোর কঠিন সময়ে তিনি (মহিউদ্দিন) মাথা নত করেননি। আমাদেরও শেখাননি মাথা নত করতে।
“মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আমাদের মেয়ে টুম্পা সাড়ে চার মাস ব্যাংককে চিকিৎসা নিয়েছে। তখন দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি, একবার যদি তাকে প্যারোলে মুক্ত করা যায়। হোসেন জিল্লুর রহমানের কাছেও গিয়েছিলাম; কারও কাছে সহযোগিতা পাইনি।”
হাসিনা মহিউদ্দিন বলেন, “হোসেন জিল্লুর শর্ত দিয়েছিলেন যদি মহিউদ্দিন চৌধুরী বন্ড দেন যে তিনি আর রাজনীতি করবেন না, তাহলে মুক্তি দিতে পারেন। কিন্তু আমি রাজি হইনি।”
পরে ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পান মহিউদ্দিন। কিন্তু ব্যাংককে চিকিৎসাধীন মেয়ে ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পার কাছে পৌঁছার আগেই তার মৃত্যু হয়।
‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়।
শনিবারের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বইটি থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, হাসিনা মহিউদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব উপদেষ্টার কাছে গিয়েছিলেন।
“ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের কাছে গেলে তিনি শর্ত দিয়েছিলেন, মুক্তি দেয়া যাবে- তবে বন্ড দিতে হবে জীবনে আর রাজনীতি করবেন না। হাসিনা মহিউদ্দিন বলেছিলেন- মৃত্যুর আগে মহিউদ্দিন চৌধুরী কখনো এ বন্ড দেবেন না।”
এরপর বাবাকে লেখা টুম্পার শেষ চিঠি পড়ে শোনান বুলবুল। এসময় মঞ্চে বসা ড. অনুপম সেন, মহিউদ্দিন ও হাসিনা মহিউদ্দিনের চোখে ছিল জলের ধারা।
অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “হোসেন জিল্লুর রহমান যে কাজ করেছেন তা অমানবিক। তাকে ধিক্কার জানাই, ঘৃণা জানাই।”
২০০৬ সালের শেষ ভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর সারাদেশে যে সহিংসতা-হানাহানি ছড়িয়ে পড়ে, পরের বছর ১১ জানুয়ারি তার আপাত অবসান ঘটে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের জরুরি অবস্থা জারির মধ্যে দিয়ে। একইসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে দেন তিনি। বাতিল করা হয় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন।
এরপর সেনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত হয় নতুন ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, যার প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদ। ওই সরকারের এক বছর পূর্তিতে নিয়োগ পান হোসেন জিল্লুর রহমান; এক বছরের কম সময় শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
হাসিনা মহিউদ্দিনের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে হোসেন জিল্লুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেই দুই বছরে দুর্নীতির মামলায় বহু রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার হন শীর্ষ দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াও।
জরুরি অবস্থা জারির পর ২০০৭ সালে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোতে সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন কেউ কেউ, যা ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা নামে পরিচিতি পায়।
এই সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন দেয়, আবার গণতন্ত্রে ফেরে দেশ। তবে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পরই নির্বাচন হয়, যাতে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।