গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে লাগাতার কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
Published : 07 Dec 2014, 01:12 PM
রোববার ২০ দলীয় জোটের মহাসচিবদের বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যেদিন দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসবে সেদিন থেকেই লাগাতার কর্মসূচি শুরু হবে।
“আমরা শুনতে পাচ্ছি, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হলে যেদিন থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ এর দাম বৃদ্ধি হবে, সেদিন থেকেই লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।। এ ব্যাপারে আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে জানতে চাইলে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “যথাসময়ে গণমাধ্যমকে তা জানানো হবে।”
সব ধরনের গ্রাহকের গ্যাসের দাম ৫ থেকে ১২২ শতাংশ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব বর্তমানে পেট্রোবাংলার বিবেচনাধীন। এছাড়া বিইআরসিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও গত নির্বাচনের আগে থেকে ঝুলে আছে।
গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এই উদ্যোগের বিরোধিতায় বিএনপি বলে আসছে, সরকারের এ পদক্ষেপ ‘শুভ’ হবে না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং জাতীয় তেল গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটিও গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগের প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করেছে।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা ১২টা থেকে ঘণ্টাখানেক এই বৈঠক চলে। এতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং চলমান আন্দোলনের কর্মকৌশল নিয়েও আলোচনা হয় বলে ফখরুল জানান।
মহাসচিবদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এমনিতেই আওয়ামী লীগের গত ৫ বছরের শাসনামলে দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে দেশের জনগণ ও শিল্প কারখানার উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কারণে জনগণের পকেট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেই সরকার এভাবে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।”
এতে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাই লাভবান হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
“জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে হ্রাস পেলেও এর কোনো প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে দেখা যায়নি। বরং উল্টো সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে”, বলেন তিনি।
‘চাল আমদানি’
সরকার ভারত থেকে ‘ব্যাপক হারে চাল আমদানি’ করায় দেশে কৃষক ধানের দাম পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।
“এই আমদানি করতে গিয়ে চালের ওপর আরোপিত ডিউটিও তুলে নেওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এভাবে অন্য দেশ থেকে ব্যাপকভাবে চাল আমদানির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।”
তিনি ‘চাল আমদানি বন্ধ করে’ কৃষকদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা
গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘রুচিহীন ও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারববির্ভূত বলেও আখ্যায়িত করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “এ রকম বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করছেন। জোটের আজকের বৈঠকে এর নিন্দা জানানো হয়েছে।”
গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমলাদের কথিত বৈঠক প্রসঙ্গে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি নেত্রীকে বলব, তিনি যদি এই রাতের অভিসারটা বাদ দেন, যা করার দিনের আলোতে করেন, তা সবার জন্যই ভাল হয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে ফখরুল বলেন, “ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী একটি দেশ সর্ম্পকে যে উক্তি করেছেন, ২০ দলীয় জোট মনে করে, এটি দুই দেশের কূটনৈতিক সর্ম্পকের ওপর নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।”
ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা দেশ পাশে না থাকলে আমরা একেবারে শেষ হয়ে যাব? ... একাত্তরেও যুক্তরাষ্ট্র বিরুদ্ধে ছিল , বাংলাদেশ শেষ হয়ে যায়নি।”
নারায়ণগঞ্জে খালেদার জনসভা
মির্জা ফখরুল জানান, আগামী ১৩ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে কাঁচপুর বালুর মাঠে ২০ দলীয় জোটের জনসভা হবে, তাতে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া।
সর্বশেষ গত ২৯ নভেম্বর কুমিল্লা টাউন হলে খালেদা জিয়া ২০ দলীয় জোটের জনসভায় অংশ নেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জোটের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, লেবার পার্টির হামদুল্লাহ আল মেহেদি, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ডিএল এর খোকন চন্দ্র দাশ, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রভাষ, জমিয়তে উলামা ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি তৈয়ব, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, পিপলস লীগের সারোয়ার খান, এনডিপির মঞ্জুর হোসেন ঈসা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও আসাদুল করীম শাহিনও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।