ক্ষমতায় গেলে সম্প্রচার আইন কিংবা বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে আনার বিধান বাতিল করার ইঙ্গিত দিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 25 Aug 2014, 11:33 PM
“আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, এই অবৈধ সরকারের আইন করার বৈধতা নেই। তাদের কোনো আইনই টিকবে না,” বলেছেন তিনি।
সোমবার নিজের গুলশানের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের জবাবও দেন তার স্ত্রী খালেদা।
সেইসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই সরকারকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে দুর্বার আন্দোলন গড়ার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
সম্প্রচার আইন এবং বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের সমালোচনা করে খালেদা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
“আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে একের পর এক আইন করছে। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। বিচার বিভাগকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে তারা এখন বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা অবৈধ সংসদের হাতে দিতে চলেছে।”
বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না দাবি করে তিনি বলেন, “বিরোধী দলের জন্য একরকম আইন, সরকারের জন্য অন্যরকম আইন।
“এরপরও সরকার আশ্বস্ত হতে পারছে না বলেই বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে দিতে চাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই- সব অপকর্ম আড়াল করা।”
সম্প্রচার নীতিমালার মাধ্যমে বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করার প্রয়াস চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “অতীতে যেভাবে বাকশাল করে চারটি ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। এখনো একদলীয় শাসন প্রক্রিয়ার দিকেই তারা দেশকে নিয়ে যাচ্ছে।”
এসব আইন করার পরিণতি শুভ হবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা বলেন, “নিয়তির এমন পরিণতি আসবে, আপনারা বাঁচতে পারবেন না। আইন করে কোনো লাভ হবে না।”
ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন না দেয়ার সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার নজর দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য দলকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে খালেদা বলেন, আওয়ামী লীগের মতো ‘সন্ত্রাসী’ আন্দোলন তাদের হবে না।
“আমি বলতে চাই, ঐক্যবদ্ধ হন, সংগঠনের দিকে জোর দিন। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, আওয়ামী লীগের সরকারের বিদায় হবে।”
বিএনপির আন্দোলনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জবাবে খালেদা বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতারা বলে, বিএনপি না কি আন্দোলন করতে জানে না। নব্বইয়ের আন্দোলনে আমরাই এরশাদকে হটিয়েছি। আওয়ামী লীগ এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করেছিল। এখন তারা মিথ্যার ওপর টিকে আছে।”
এই বিভাগের ৮ জেলার ৫৮টি উপজেলা পরিষদে বিএনপি সমর্থিতরা ২৪টি চেয়ারম্যান, ১৪টি ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২৪টি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়।
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে খালেদা বলেন, “আপনারাই সত্যিকারের জনপ্রতিনিধি। সংসদে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। তাই সততার সঙ্গে জনগণের জন্য কাজ করুন।”
‘জিয়া ঘোষণা না দিলে শেখ মুজিব থাকতেন কারাগারে’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমানকে নিয়ে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার জবাবে পুনরায় নিজের স্বামীকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করেন খালেদা।
“কথায় কথায় জিয়াউর রহমান। আরে জিয়াউর রহমানই তো স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছে এই দেশের মানুষকে। জিয়াউর রহমান যদি স্বাধীনতার ঘোষণা না করতেন, দেশ যদি স্বাধীন না হত, শেখ সাহেব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন কি না সন্দেহ রয়েছে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশে ফিরে নির্যাতনের স্বীকার হওয়ার যে বর্ণনা শেখ হাসিনা দিয়েছেন, সে বিষয়েও কথা বলেন খালেদা।
“জিয়াউর রহমান ওই সময়ে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে লোক পাঠিয়েছিলেন। কেবল আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া তাকে ওই সময়ে ৩৩ কোটি টাকার সম্পদ ও মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল, যার বর্তমান মূল্য হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ।”
জিয়াকে নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বক্তব্যের সমালোচনা করে খালেদা বলেন, “এক সময় মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, শেখ মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবে। আর ইনুরা বলেছিল, শেখ মুজিবের লাশ কবর না দিয়ে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দিতে।
“আজ এই মতিয়া-ইনু আওয়ামী লীগের দোস্ত হয়েছে। কাফফারা দিয়ে মন্ত্রী হয়েছেন, নিজেদের মন্ত্রিত্ব ঠিক রাখতে আওয়ামী লীগের জন্য দরদে ফেটে পড়ছেন।”
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “৫ জানুয়ারি আসন ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে। ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলে নিয়েছে আওয়ামী লীগ, এরশাদকে ক’টা আসন দিয়েছে। তাতেই সে খুশি। তার কীর্তি কলাপ জনগণ জানে।”
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নানা বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা বলেন, “শেখ হাসিনা লগি-বৈঠা নিয়ে আন্দোলন করে মানুষ হত্যা করেছে। বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭ সেনা কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার ও তার দলের নেতাদের হাত ছিল।”