বিদেশিদের কাছে ধর্না দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না বলে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
Published : 21 Jan 2014, 04:25 PM
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের দেয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সোমবার দলের ধানমণ্ডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
সাতক্ষীরায় যৌথঅভিযান নিয়ে খালেদা ‘মিথ্যাচার’ করেছেন বলেও দাবি করেছেন আশরাফ।ওই বক্তব্য ‘রাষ্ট্রদ্রোহসম’ দাবি করে তার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিএনপির বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর সোমবার রাজধানীতে প্রথম জনসভা করেন খালেদা। তিনি সংলাপের মাধ্যমে নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
৫ জানুয়ারির ভোটের চিত্র বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভোটাররা কেন্দ্রে না গিয়ে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আশরাফ বলেন, “খালেদা জিয়া বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, এটা বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সুখকর নয়।”
“রাষ্ট্রদূতদের কোনো ক্ষমতা নেই রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তন করার। কোনো মুরব্বি দিয়ে এটা সম্ভব নয়।”
আওয়ামী লীগ নেতা আরো বলেন, “ক্ষমতায় যাওয়ার আশায় তিনি দেশের সাথে সাথে নিজের ইজ্জতও রাখেননি। উনি রানির মতো বসে রইলেন, ভাবলেন তাকে রাষ্ট্রদূতরা রসগোল্লা খাইয়ে দিয়ে যাবে।
“উনি কূটনীতি এবং আন্দোলন দুটোতেই ব্যর্থ হয়েছেন। ভেবেছিলেন কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত তাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন।”
বিএনপিবিহীন দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে অধিকাংশ দেশ হতাশা প্রকাশ করে সব দলের অংশগ্রহণে নতুন করে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।
আশরাফ বলেন, বিদেশিরা অনেক সময় দেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলেও আওয়ামী লীগ তা ‘প্রশ্রয়’ দেয় না।
সাতক্ষীরা অভিযান নিয়ে খালেদার বক্তব্যের জবাবে আশরাফ বলেন, “খালেদা জিয়া নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”
যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় প্রকাশের পর থেকে জামায়াতে ইসলামীর তাণ্ডবে ক্ষতবিক্ষত সাতক্ষীরায় সম্প্রতি যৌথঅভিযান শুরু হয়েছে।
ওই অভিযানে ভারতীয় বাহিনী অংশ নিচ্ছে বলে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত প্রয়াত আব্দুল মান্নানের প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
তথ্য বিকৃতির অভিযোগে মামলার পর ইনকিলাবের তিন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এর প্রকাশ। ইনকিলাব ওই প্রতিবেদনের জন্য ক্ষমাও চেয়েছে।
জনসভায় বক্তব্যে খালেদা সাতক্ষীরা অভিযানের সমালোচনার পাশাপাশি ইনকিলাব বন্ধের নিন্দাও জানান।
তিনি বলেন, “সাতক্ষীরার মতো ছোট জায়গায় যৌথবাহিনী যেভাবে মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে। মা-বোনদের হত্যা করা হয়েছে।”
“সাতক্ষীরায় অভিযানে আদৌ যৌথবাহিনী ছিল কি না, তা সঠিক করে কেউ বলতে পারে না, মানুষের মনে অনেক সন্দেহ।”
ভারতীয় অভিযানের বিষয়ে সংবাদের ব্যাখ্যা না দিয়ে ইনকিলাব বন্ধের নিন্দা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
আশরাফ বলেন, “তিনি বর্হিদেশের সঙ্গে যুদ্ধ চান? যদি চান, তা ভয়ঙ্কর কথা। প্রকাশ্যে এ ধরনের উক্তি করলে প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না। এটা করলে কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিশ্চিত হবে?”
ইনকিলাব ও প্রথম আলোর দেখিয়ে খালেদার বক্তব্যের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, “উনার এক হাতে ইনকিলাব আরেক হাতে প্রথম আলো। কী কারণে এত...”
‘রাষ্ট্রদ্রোহমূলক’ বক্তব্যের জন্য খালেদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
“কেউ যদি অপপ্রচার করে তবে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। যদি ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে তা জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।”
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিরমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
‘প্রমাণ আছে, সমাবেশে শিবির ছিল’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে শিবিরের ‘ক্যাডাররা’ অংশ নিয়েছিল বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, “উনি যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে অনেক কিছুই আড়াল করেছেন। বিদেশি এবং জনগণের চাপে সুপরিকল্পিতভাবে জামাতকে আড়াল করেছেন।
“আমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আছে, জামাতের চিহ্নিত কেউ না থাকলেও শিবিরের ক্যাডাররা উপস্থিত ছিল। অস্ত্র নিয়ে উপস্থিত ছিল।”
সৈয়দ আশরাফ বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ের বোমা হামলার সমালোচনা করেন।
একদিন আগে দেয়া বক্তব্যে খালেদা দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী তাদের শাসনামলে উদীচী ও সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনাগুলো তুলে ধরেন।
‘বিএনপির কর্তৃত্ব কার হাতে?’
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে বিএনপি দুই ধরনের কথা বলছে বলে অভিযোগ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ।
খালেদার উদ্দেশে তিনি বলেন, “অবৈধ সরকার বলে আলোচনা চাইলেন। তারেক জিয়া বলছেন আলোচনা হবে না, খালেদা জিয়া বলছেন আলোচনা হবে। কোনটা সত্য? বিএনপির কথা কে বলে? হু ইজ দ্যা হাই কমান্ড? লেজ কে আর মাথা কে?
“ক্ষমতায় থাকার সময়ও হাওয়া ভবন করে সরকারের দ্বিতীয় কেন্দ্রবিন্দু তৈরি করেছিলেন। এখনো তাই। তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে, কে তাদের প্রধান। প্রধান কার্যালয় কোনটা?”
“তিনি ঠিক করবেন, কে তার দলের নীতি নির্ধারক। সেটা ঠিক করতে পারলে বুঝব, আমরা কার কথার গুরুত্ব দেব,” বলেন আশরাফ।
‘নির্বাচনে তো গরু প্রার্থী ছিল না’
নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচিতে ‘নাশকতার’ সমালোচনা করে সৈয়দ আশরাফুল বলেন, “নির্বাচনে তো গরু প্রার্থী ছিল না। তাদের কেন পুড়িয়ে মারলেন? টমেটো-গাজর-মানুষ সব পোড়ালেন।”
“খালেদার হাতে কেউ নিরাপদ নয়। তার সাংঘাতিক ক্রোধ।”