সমাবেশ সফলের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খালেদা জিয়ার জনসভায় ছিল না জামায়াতে ইসলামী।
Published : 20 Jan 2014, 01:58 PM
জোট শরিক বিভিন্ন দলের পাশাপাশি জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ সমাবেশে বক্তব্য রাখলেও মঞ্চে দেখা যায়নি জামায়াতের কোনো নেতাকে।
১৮ দলের অন্যসব জনসভায় জামায়াতের কর্মীদের দৃশ্যমান উপস্থিতি দেখা গেলেও তাও ছিল না সোমবারের সমাবেশে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন ‘প্রত্যাখ্যান’ করায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাতে ১৮ দলীয় জোটের প্রধান খালেদা জিয়া ২০ জানুয়ারির এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশ একান্তই তাদের; যদিও সেদিনই জামায়াতের এক বিবৃতিতে এই সমাবেশকে ১৮ দলের কর্মসূচি ধরে তা সফলের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান ওই বিবৃতিতে বলেন, “১৮ দলীয় জোট ঘোষিত ২০ জানুয়ারি দেশের সকল মহানগরী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গণসমাবেশ, শোভাযাত্রা এবং ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য আমি দেশের আপামর জনতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
ঢাকায় সমাবেশে জামায়াতের অংশগ্রহণ না থাকলেও কেন্দ্রঘোষিত এই কর্মসূচিতে চট্টগ্রামে উপস্থিত ছিলেন দলটির নেতা-কর্মীরা। বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি জামায়াতের তিন নেতাও বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির বর্জনের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর খালেদা জিয়া জোট নেতাদের নিয়ে যে বৈঠক করেন, তাতে জামায়াতের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি এই নির্বাচন বাতিল চেয়ে নতুন করে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত ও সন্ত্রাস ছাড়লে এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
অন্যদিকে ভোটের পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এক প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছে, যা স্পষ্টতই বিএনপিকে চাপে ফেলেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
এর মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় জামায়াত নেতাদের অনুপস্থিতি ধরা পড়ল। শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে চাপে থাকা দলটির কোনো ব্যানার-ফেস্টুনও ছিল না সমাবেশে।
প্রায় দুই মাস পর রাজধানীতে সমাবেশ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বেশ উদ্দীপনা দেখা গেছে।
বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খালেদা জিয়ার নামে স্লোগান মুখে নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন তারা। আটক বিভিন্ন নেতার ছবিও ছিল অনেকের হাতে।
জনসভা উদ্যানের ভেতরে হলেও শাহবাগ মোড় থেকে হাই কোর্ট পর্যন্ত সড়কজুড়ে অবস্থান নেয় কর্মীরা। ২২ ফুট চওড়া ও ৪২ ফুট লম্বা মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখেন নেতারা। মাঠজুড়ে লাগানো হয় ১২০টি মাইক।
এই সমাবেশে ১৮ দলের নেতাদের মধ্যে এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ, বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনডিপির চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বক্তব্য দেন।
অন্য সময় জামায়াত নেতা যে সময়টাতে বক্তব্য দিতেন, সে সময়টিতে বক্তব্য দেন কাজী জাফর।
খালেদার ঠিক আগে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “দেশ এখন গভীর সঙ্কটে, স্বাধীনতার পরে এরকম অবস্থা কখনো দেখিনি। এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার এর জন্য দায়ী।”
এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক নির্যাতনের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেন।
আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে নতুন নির্বাচন দেয়া না হলে দেশে আবার অস্থিরতা তৈরি হবে বলে সরকারকে সাবধান করেন তিনি।
পার্থ বলেন, “এই সরকার বলেছিল আমরা নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছি। আমরা ট্রেন মিস করিনি। যে ট্রেনে জনগণ ওঠে না, সে ট্রেনে ১৮ দলও ওঠে না। আপনারা যে ট্রেনে যাত্রা শুরু করেছেন, তার নিচেই চাপা পড়বেন।”