নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনের প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য বিরোধী দলের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 21 Dec 2013, 04:45 PM
বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে নিরব থাকার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের সমালোচনাও করেন।
নির্বাচনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা জানতাম, বিরোধী জোট নির্বাচনে আসছে। এজন্য আমরা মহাজোট আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছি। আমাদের দলের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বিরোধী দল এলে তো ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিন্দ্বিতায় নির্বাচিত হত না।
“বিরোধী দল এল না, এ তো আমাদের দোষ না। খালি মাঠ, গোল তো হবেই। খেলার মাঠে অপরদিকে গোলকিপার নেই। তাহলে তো আমরা গোল দিয়েই যাব।”
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিএনপি।
সেই আলোচনা চললেও দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার সুযোগ নেই, একথা আবার বলেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা।
তিনি বলেন, “আলোচনা করে আমরা যদি সফল হই, যদি সমঝোতা হয়, তবে আবার নির্বাচন দেয়ার কথা তো আমি আগেই বলেছি।
“তবে তাদের জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে, হত্যা বন্ধ করতে হবে, বিভিন্ন স্থানে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন করছে, তা থামাতে হবে।”
যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, “জিয়া ক্ষমতায় এসে দালালদের বিচার বন্ধ করে দেন। নাগরিকত্ব নিয়ে যারা পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলো, এমন অনেককে ফিরিয়ে আনেন।
“শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানান, যে আলীমের বিচার চলছে তাকে মন্ত্রী বানান, ইনকিলাবের বর্তমান মালিকের বাবা মান্নানকে মন্ত্রী বানান।”
জিয়ার আমলে সামরিক বাহিনীতে বিচারের নামে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “১৯ বার ক্যু হয়েছে। কীসের বিচার, জিয়া নির্বিচারে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে। যার মধ্যে সেক্টর কমান্ডাররাও ছিলেন। প্রায় দুই হাজার অফিসার ও সৈনিককে জিয়া হত্যা করে।”
খালেদা জিয়ার সরকারে যুদ্ধাপরাধীদের স্থান দেয়ার সমালোচনাও করেন তিনি।
“আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। এটা জনগণকে দেয়া আমাদের অঙ্গীকার। যারা একাত্তরে আপনজন হারিয়েছে, তারা বোঝে এর ব্যথা কতটুকু।”
বিচারে বাধা পাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা এই বিচার করছি। এই বিচার এগিয়ে নিচ্ছি। অনেক বড় বড় টেলিফোন এসেছে। কিন্তু আমি জাতির সঙ্গে ওয়াদা করেছি, যা সত্য বলে জেনেছি তাই করব।”
কাদের মোল্লার জন্য পাকিস্তান পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাবের ক্ষোভ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের সব মানুষ প্রতিবাদ করল, কিন্তু উনি (খালেদা জিয়া) করলেন না।
“জানজুয়া মারা যাওয়ার পর অবশ্য তিনি শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন। জানজুয়া কী ছিলো। সে ছিলো একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার জন্য প্রধানমন্ত্রী কেন শোকবার্তা পাঠাবেন? রহস্যটা কী, জাতি সেটা জানতে চায়।”
বিরোধী দলবিহীন চলমান নির্বাচনের সমালোচনার জবাবে বিএনপিকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
“উনি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে খুনি কর্নেল রশিদকে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েছিলেন। খুনিকে সঙ্গে রাখা উনার অভ্যাস।”
“হাই কোর্ট জামায়াতের নির্বাচন করার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। সেখানে আমরা কী করতে পারি। কিন্তু জামায়াতে ছাড়া উনি নির্বাচনে আসবেন না। জামায়াত ছাড়া উনি জনগণের সামনে দাঁড়াতে ভয় পান।”
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আহমদ হোসেন প্রমুখ।
পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে খালেদা জিয়ার নিরবতার নিন্দা জানিয়ে সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা মঙ্গলবার বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।