জরুরি অবস্থায় শিক্ষক-ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়নে ডিজিএফআইয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল জানিয়ে সংসদীয় কমিটি বলেছে, রাজনীতিতে এই সংস্থাটির হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
Published : 06 Feb 2012, 02:42 PM
জরুরি অবস্থার মধ্যে ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার, নির্যাতনে ডিজিএফআইয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল জানিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক বিষয়ে এই সংস্থার হস্তক্ষেপ বন্ধের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।
২০০৭ সালের ছাত্র বিক্ষোভের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সোমবার সংসদে তাদের প্রতিবেদন দেয়।
এতে রাজনৈতিক বিষয়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) হস্তক্ষেপ বন্ধসহ ১৩টি সুপারিশ জানানো হয়।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে প্রতিবেদন দিয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এ নিয়ে সংসদে আলোচনা এবং এর সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
জিমনেসিয়ামে কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে সেনাসদস্যদের তর্কাতর্কির জের ধরে জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২৩ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তখন গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষকসহ অনেক ছাত্রকে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর(ডিজিএফআই)সহ নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা যেমন পুলিশ, র্যাব ইত্যাদি বাহিনীর বাড়াবাড়ি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে নগ্ন হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত ঘটনাবলীর অন্যতম কারণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্ঘটিত ঘটনার জন্য তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা আইয়ুব কাদরী ডিজিএফআইকে দায়ী করে সংসদীয় কমিটির কাছে বক্তব্য দেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
আইয়ুব কাদরী কমিটিকে বলেন, ঘটনার পরপরই উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভা হয় এবং তাতে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন ও দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
“কিন্তু আকস্মিকভাবে ওই সভায় ডিজিএফআইয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত হয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন এবং সভার কার্যপত্রে তা না রাখার চাপ দেন। কেবল তাই নয়, ওই গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের গ্রেপ্তার করা হয়,” কাদরীকে উদ্ধৃত করে বলা হয় প্রতিবেদনে।
সংসদীয় কমিটির অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিক্ষক-ছাত্রদের গ্রেপ্তার, নির্যাতন, তাদের সাজা দেওয়া, মুক্তিতে দেরির করার সব বিষয়ে ডিজিএফআইয়ের হস্তক্ষেপ ছিল।
কমিটি বলছে, “ডিজিএফআই ও কতিপয় সেনা সদস্য শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে যে নির্যাতন করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।”
ডিজিএফআই’র তৎকালীন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল এ টি এম আমীন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারী, কর্নেল শামসুল আলম ওই সময় দায়িত্বের সীমা লঙ্ঘন করেছেন বলে কমিটি মত প্রকাশ করেছে।
সংসদীয় কমিটি ছাত্র বিক্ষোভ, নির্যাতন, হামলা, মামলার জন্য সেনা সমর্থিত ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমদ ও তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের পাশাপাশি ডিজিএফআই কর্মকর্তা আমিন, বারী, শামসুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
পাশাপাশি বলেছে, “প্রতিরক্ষা বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা থাকতেই পারে, কিন্তু বেসামরিক বিষয়ে বিশেষ করে রাজনৈতিক বিষয়ে ডিজিএফআইয়ের হস্তক্ষেপ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।”