ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- উপজেলা নির্বাচনে সর্বশেষ ৪১২টি উপজেলার ফলাফল প্রকাশ করা হলেও নির্বাচন কমিশন কারও দলীয় পরিচয় উল্লেখ করেনি। তবে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের তথ্যানুযায়ী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল জয় পেয়েছে এই নির্বাচনে।
আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন ৩৭৯টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ২৪২টি এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ৭১টিতে বিজয়ী হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ২০টি, জাতীয় পার্টির নেতারা জিতেছেন ১৩টি উপজেলায়। বাকি বিজয়ীরা অন্যান্য দলের ও নির্দলীয় প্রার্থী।
কয়েকটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ৪৬৪টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের ফলাফলে ৩০৭টিতে আওয়ামী লীগ এবং ৮৩টিতে বিএনপি সমর্থিত প্রাথীদের বিজয়ী হওয়ার খবর জানানো হয়েছে। তাদের তথ্যমতে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ২০টি, জাতীয় পার্টির নেতারা ১৫টি, জাসদ ৬টি, ইউপিডিএফ তিনটি, সিপিবি, এলডিপি ও ওয়ার্কার্স পার্টি দুইটি করে এবং নির্দলীয় প্রার্থীরা ২১টি উপজেলায় জয়ী হয়েছেন।
গত ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টায় সারা দেশের ৪৭৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটদানে বাধা, সংঘর্ষ, অনিয়মের কারণে দুপুর সাড়ে ১২ পর্যন্ত সিরাগঞ্জের বেলকুচি, কুমিল্লার বরুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা র্নিবাচন স্থগিত করা হয়। ৪৮১টি উপজেলার মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি স্থগিত করা হয় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, বুধবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার নির্বাচন। এছাড়া গোলোযোগের কারণে বৃহস্পতিবকার স্থগিত করা হয় ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায়, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ।
হামলা-সংঘর্ষে একজন নিহত এবং অন্তত দুইশ' লোক আহত হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার ও সাজা দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে ৫০ জনকে। এর মধ্যে ব্রাহ্মবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে মারা গেছেন আওয়ামী লীগ কর্মী অলি মিয়া।
সামগ্রিকভাবে এদিন ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল কম। গত মাসের জাতীয় নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়লেও উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ৫০ শতাংশ ভোটার। গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড পরিমাণ শতকরা ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে।
কম ভোটার উপস্থিতি এবং অনেক স্থানে সহিংসতা ও অনিয়মের ঘটনায় সার্বিকভাবে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা। (বিস্তারিত)
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কিছু উপজেলায় নির্বাচনের সময় মন্ত্রী,এমপিরা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিকেল সাড়ে চারটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, "দীর্ঘ ১৮ বছর পর উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটবে, এটাই চেয়েছিলাম। তবে এখন আমাদের কিছু অসন্তোষ রয়েই গেল। যে পরিমাণে ভোটারদের উপস্থিতি আশা করেছিলাম, তেমনটা হয়নি।"
তরুণ ও মহিলা ভোটারদের উপস্থিতির হার জাতীয় নির্বাচনে বেশি থাকলেও উপজেলায় কেন কম হলো তা অনুসন্ধান করা হবে বলে জানান তিনি।
অতীতে ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে বরাবরই প্রভাব ফেলেছে মন্তব্য করে শামসুল হুদা বলেন, "আমরা এই নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। এখন রাজনৈতিক সরকারের আমলে মন্ত্রী,এমপিরা কোথাও কোথাও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন। যেসব এলাকায় এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি, সেসব উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।"
সিইসি বলেন নির্বাচনে বড় ধরনের সহিংসতা না হলেও ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়া, ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল করে ভোট কারচুপির প্রচেষ্টা ও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে।
শামসুল হক বলেন, "রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কিছু পরিবর্তন আসছে, এমনটাই আশা করছি আমরা। মন্ত্রী, এমপিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন, এমনটা আশা করিনি।"
এদিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের লোকজন ব্যালটে ইচ্ছামতো সিল মেরেছে, কেন্দ্র দখল করে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে।
ভোট শেষে বিকেল ৪টায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দপ্তর সম্পাদক রিজভী আহমেদ বলেন, "সারাদেশ থেকে উপজেলা নির্বাচনে আমাদের সমর্থিত প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে সরকারি দলের কর্মীরা ভোট কেন্দ্র দখল করেছে। আমাদের মনিটরিং সেলে তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগগুলো জমা হচ্ছে।"
তিনি দাবি করেন, সরকারি দলের কর্মীরা বিভিন্ন উপজেলার কেন্দ্রগুলো দখল করে ইচ্ছেমতো সিল মেরে ব্যালট পেপার বাক্সে ঢুকিয়েছে। অধিকাংশ কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন রিজভী আহমেদ।
অ্যদিকে অন্যদিকে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের দাবি, এসব 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা'; নির্দলীয় নির্বাচনে দলীয় হাঙ্গামার প্রশ্নই ওঠে না।
সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখপাত্র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, "সারাদেশে বড় কোনো সহিংসতার কোনো খবর আমরা পাইনি। এসব 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারেনি।"
বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় আওয়ামী লীগ কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমরা এ ধরনের কোনও ঘটনার সত্যতা পাইনি। যেহেতু নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়নি, তাই এখানে দলীয় হাঙ্গামার প্রশ্নই ওঠে না।"
"এই নির্বাচন দলগত নয়। এখানে আমরা প্রার্থী দেইনি, তবে আমাদের (আওয়ামী লীগ) সমর্থিত প্রার্থী ছিল। আমাদের দলীয় মন্ত্রী সাংসদরাও নির্বাচনী প্রচারণায় যাননি।"