ভোটের আগে জনগণকে দেওয়া ওয়াদা ভুলে না যেতে নারায়ণগঞ্জের নব নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং কাউন্সিলরদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Published : 09 Feb 2022, 11:39 AM
বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ সিটির নতুন জনপ্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখবেন। মানুষের কাছে যে ওয়াদা দিয়ে ভোট নিয়েছেন, সেই ওয়াদাটা কখনো ভুলবেন না। মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন।”
গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার।
আইভীর শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে কোনো একজন রাজনৈতিক নেতার জন্য নিজের স্বার্থ না দেখে পরের স্বার্থে কাজ করা, জনগণকে কতটুকু দিতে পারলাম, কতটুকু তাদের জন্য করতে পারলাম, সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। যতটুকু আপনি দিতে পারবেন তাতেই আত্মতৃপ্তি।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেষ হাসিনার ভাষায়, নিজের ভোগ বিলাসে না, রাজনৈতিক নেতা হতে হলে জনকল্যাণে কাজ করতে হয়, নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে হয়।
“জাতির পিতা আমাদের সেই আদর্শ শিখিয়ে গেছেন। আমি আশা করি, সেই আদর্শ নিয়েই আপনারা চলবেন। তাহলে আপনার নেতৃত্বও থাকবে, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবেন, বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন।”
সরকারপ্রধান বলেন, জনপ্রতিনিধিদের এটা মনে রাখতে হবে যে মানুষ ‘খুব সচেতন’। সেটা মাথায় রেখেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের পরিবেশের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনারা বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। জনগণ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে এবং তাদের মন মত প্রার্থী নির্বাচন করতে পেরেছে।”
এ জন্য নির্বাচন কমিশনসহ নারায়ণগঞ্জে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকার সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
‘গণতন্ত্রের অর্থ তারা বোঝে না’
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “যদিও আমাদের বিরোধী দল অনেক অপপ্রচার চালায়, কিন্তু তারা কখনও আয়নায় নিজের চেহারা দেখে না যে এই বিএনপি-জামায়াত অথবা অন্যরা যারা এই ধরনের সমালোচনা করে থাকে, তাদের প্রতিষ্ঠা কার হাত দিয়ে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে।
“জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ার কোনো অভ্যাসই তাদের ছিল না বরং কেড়ে নেওয়া, চুরি করাই তাদের অভ্যাস ছিল।”
শেখ হাসিনা বলেন, “তারা গণতন্ত্রের অর্থও বোঝে না, জনগণের অধিকারের অর্থও তারা বোঝে না। সেই শিক্ষাই তাদের নাই। তারা বোঝে সন্ত্রাস, তারা বোঝে দুর্নীতি, তারা বোঝে জঙ্গিবাদ।
“তারা বাংলা ভাই সৃষ্টি করতে পারে, তারা মানুষ হত্যা করতে পারে, হাত কাটতে পারে, চোখ কাটতে পারে, মানুষের ঘরবাড়ি দখল করতে পারে- এইগুলো তারা পারে। সেই সুযোগটা পাচ্ছে না বলেই বোধহয় তাদের বেশি আক্ষেপ।”
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে শপথ অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “তাদের তো নেতৃত্ব বলে কিছু নেই। একজন এতিমের অর্থ আত্নসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত বন্দি, আমরা দয়া করে তাকে তার বাড়িতে থাকার একটা সুযোগ করে দিয়েছি। আরেকজন দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা এবং দুর্নীতি… সেই দুর্নীতির তথ্য ছিল… আমরা না, এটা আমেরিকার এফবিআই তুলে ধরেছে, তারাই সাক্ষ্য দিয়েছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “সেই সব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ২০০৭ সাল বা ২০০৮ সালের দিকে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দেয় যে ‘আর কোনোদিন রাজনীতি করব না’, এই মুচলেকা দিয়েই দেশ থেকে চলে গিয়েছিল খালেদার ছেলে তারেক রহমান। এখন বিদেশেই সে থাকে। কাজেই বিদেশে থেকে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি যে দলের চেয়ারপারসন হয়, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে... সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবার ফিউজেটিভ।”
বিএনপিকে জনগণ কেন ভোট দেবে- সেই প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “তারা আসলে নির্বাচনই চায় না। তারা নির্বাচনের অর্থ বোঝে না। ভোট চুরি করতে জানে, কিন্তু জনগণের ভোট নিতে জানে না। জনগণের যে ভোট দেবার অধিকার সে অধিকারে তারা বিশ্বাস করে না। এটা হলো বাস্তবতা।”
আওয়ামী লীগ ‘জনগণের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি জনগণ তার ভোট দিয়ে তার মনমতো প্রার্থী নির্বাচিত করবে যে তাদের জন্য কাজ করবে। কারণ জনগণ কখনও ভুল করে না- এটা হলো বাস্তবতা। সেটা নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে ভালোভাবে প্রতিভাত হয়েছে। কে তার জন্য কাজ করবে- সেটা জনগণ নিজেরাই বেছে নিতে পারেন। সেই বিবেচনা জনগণের আছে এবং জনগণের উপর আস্থা রেখেই আমরা আমাদের যত রকম কাজ করি।”
আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন উন্নত হবে সেই পরিকল্পনা করে দিয়ে যাওয়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আমাকে চিন্তা করতে হয়, কারণ আমারও তো বয়স হয়েছে। ৭৫ বছর বয়স আমার। কাজেই আর কতদিন বাঁচব।
“কিন্তু এমনভাবে দেশের কাঠামো করে দিয়ে যেতে চাই, এমনভাবে পরিকল্পনা করে দিতে চাই, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারাটা ধরে রাখতে পারে, উন্নত জীবন পায়, সুন্দর জীবন পায়।
“আর যেন কখনও কারও দ্বারা নিষ্পেষিত হতে না হয়, নির্যাতিত হতে না হয়, সুন্দরভাবে যেন মানুষ বাঁচতে পারে। সেই ব্যবস্থাটাই আমি করে দিয়ে যেতে চাই।”
১৩ বছর ধরে বাংলাদেশে ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “ফলে আজকে দেশের উন্নতি হচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
“গতকালকেই (মঙ্গলবার) আমাদের পরিকল্পনা কমিশনের নেতৃত্বে একটি সভায় ঘোষণা দেওয়া হয় যে, আমাদের মাথাপিছু আয় কত হল। সেখানে আজকে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার। সেই সাথে সাথে আমাদের জিডিপি ৬ দশমিক ৯৪% আমরা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘণ করে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা এবং পরে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া যখন সরকারে আসে, সেই সময়ে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।