রামপুরার ঘটনা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের অনেক প্রশ্ন

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে রামপুরায় বাসচাপায় এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন জেগেছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2021, 01:17 PM
Updated : 1 Dec 2021, 01:23 PM

বাসচাপায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরপরই একের পর এক গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনাটি পরিকল্পিত বলেই মনে হচ্ছে তার।

বুধবার নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের সোমবারের ওই ঘটনা নিয়ে নিজের সন্দেহের কথা প্রকাশ করেন।

ঢাকায় হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলন জোরদার হয়।

এরপর গত সোমবার রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হলে ক্ষোভ আরও বাড়ে। সেই রাতেই সড়কে অন্তত আটটি বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য মতে ঘটনাটি ঘটে রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে, এর ১২ মিনিট পর ১০টা ৫৭ মিনিটে নিরাপদ সড়ক চাই ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে উক্ত স্থান থেকে লাইভ করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ১৭টি বাসে আগুন দেওয়া হয় এবং অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।”

সন্দেহের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “এটা কি নিছক দুর্ঘটনা? না কি পূর্ব  পরিকল্পিত? রাত ১১টায় জামায়াত পরিচালিত টেলিগ্রাম চ্যানেল খবটি প্রকাশিত হয় এবং দুর্ঘটনার স্থান থেকেই সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।

“খবরটি ছড়িয়ে পড়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই প্রায় ১৫টি বাসে আগুন দেওয়াও শেষ হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিষয়টি আসলেই দুর্ঘটনা কি না? ঘটনার ১২ মিনিটেই নিরাপদ সড়ক চাই পেইজ লাইভে গেল কীভাবে? না কি তারা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল?

“বাঁশেরকেল্লা ১৫ মিনিটের মধ্যেই সব খবর পেয়ে গেল কীভাবে? আর বাকি ১০ মিনিটেই ১০টি গাড়িতে আগুন কীভাবে দেওয়া হল? এত জনবল রাত ১১টার পর ঘটনাস্থলে এল কীভাবে?  তাহলে তারা কি আগেই প্রস্তুত ছিল?”

কাদের বলেন, “সেনাবাহিনী, পুলিশ বা ফায়ার ব্রিগেড এত তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারে না, যত দ্রুত গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এত রাতে অল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা কি এত দ্রুত পৌঁছে গেছে? এমনিতেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আন্দোলন চলছে, যারাই দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছেন তারা সবাই শিক্ষার্থী। গাড়ীতে কি ছাত্র ছাড়া  অন্য আর যাত্রী থাকে না? বিষয়টি মোটেই দুর্ঘটনা নয়।”

নিজের সন্দেহ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “গত সোমবার রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় একজন কলেজ ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা বিএনপি-জামায়াতের অতীত সহিংস অপকর্মের পুনরাবৃত্তি কি না, তা খতিয়ে দেখতে জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন।”

“এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকার বদ্ধপরিকর,” বলেন তিনি।

এদিন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত ফাইভজি ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানেও ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন কাদের।

তিনি জানান, আগামী ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে ফাইভজি প্রযুক্তির সেবা পরীক্ষামূলকভাবে উদ্বোধন করবেন।

কাদের বলেন, সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি চালুর কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।

“প্রথমে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি কার্যালয় ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহে সীমিত পরিসরে ফাইভজি সেবা চালু হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই সেবা দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্ভর এলাকাসমূহে বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে।”

তিনি বলেন, “ফাইভজির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ফাইভজি চালু হলে কল ড্রপের সংখ্যা কমে যাবে বলে আমরা আশা করি। মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে তৈরি হবে জিরো ডিসটেন্স কানেক্টিভিটি। বিগডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ফাইভজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ফাইভজি চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিংবা অগমেন্টেড রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স নেওয়া ফাইজির কল্যাণে আরও সহজ হয়ে যাবে।”

এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপ-কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর।

আলোচক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সাহাব উদ্দিন।