সড়কে মৃত্যুর পর ঢাকার রামপুরায় ৮ বাসে আগুন

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার রামপুরায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি বাস পুড়িয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা, ভাংচুরও করেছে আরও কয়েকটি বাস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2021, 05:48 PM
Updated : 30 Nov 2021, 06:14 AM

সোমবার রাত ১০টার দিকে ডিআইটি রোড পূর্ব রামপুরা লাজ ফার্মার সামনে গ্রিন অনাবিল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় ওই শিক্ষার্থী মারা যান। এর পরপরই জনতা বাস আটকে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে।

নিহত মো. মাঈনউদ্দিন স্থানীয় একরামুন্নেসা স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তার বাবার নাম আব্দুর রহমান ভান্ডারি, তিনি চা বিক্রেতা। তাদের বাসা পূর্ব রামপুরা তিতাস রোড।

মাঈনউদ্দিনের ভগ্নিপতির ভাই মো. বাদশা ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার ভাইসহ তিন বন্ধু ডিআইটি রোডের সোনালী ব্যাংকের সামনের সড়ক দিয়ে পার হচ্ছিল। তখনই এই ঘটনা ঘটে।”

পূর্ব রামপুরার বাসিন্দা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নেসার হোসেন বলেন, অনাবিল পরিবহনের একটি বাস এসে তাদের চাপা দেয়। এতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মাঈনউদ্দিন মারা যান। গুরুতর আহত হন আরেকজন। ঘটনাস্থল থেকে লাশ মাঈনউদ্দিনের তিতাস রোডের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মালিবাগের পাবনা কলোনির বাসিন্দা জীবন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাসের চাপায় ওই শিক্ষার্থীর দেহ সড়কে একেবারে পিষে যায়। পরে উত্তেজিত জনতা গ্রিন অনাবিলের বাসটিসহ কয়েকটি বাসে আগুন ধরিয়ে দিতে শুরু করে।

রাত পৌনে ১২টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আটটি বাস আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন। আরও চারটি বাস ভাংচুর করা অবস্থায় দেখেন তিনি।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসের চালক আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১৬ জন যাত্রী নিয়ে তারা বান্দরবান যাচ্ছিলেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে রামপুরা এসে যানজটে আটকা পড়েন। তখন কয়েকজন তরুণ দৌড়ে এসে গাড়ি ঘোরাতে বলেন। কিন্তু যানজটের মধ্যে গাড়ি ঘোরানোর কোনো সুযোগ ছিল না।

কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েকজন তরুণ লাঠিসোঁটা হাতে এসে যাত্রীদের নামিয়ে গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা ম্যাচ জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে জানান রউফ।

বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেলেও এর যাত্রী বা কর্মীদের কেউ আহত হননি।

ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করা হলে ডিউটি অফিসার এরশাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রামপুরা সড়কে নয়টি বাসে আগুনের খবর পেয়ে তাদের বাহিনীর কয়েকটি ইউনিট আগুন নেভাতে গেছে।

রাত ১টার দিকে মাঈনউদ্দিনের বাসা থেকে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর সোয়া ১টার দিকে রাস্তার একপাশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয় পুলিশ।

ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের জানান, অনাবিলের বাসটির চালককে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, দুর্ঘটনার পর কিলোমিটারখানেক ধাওয়া করে মালিবাগ রেলগেট এলাকায় বাসটিকে আটক করা হয়। এরপর বাসের চালককে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা।

মাঈনউদ্দিনের স্বজন বাদশা বলেন, “অনাবিল ও রাইদা পরিবহনের দুটি বাস পাল্লা দিতে গিয়ে আমার ভাইদের উপর উঠে যায়। আমি দুই পরিবহনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।”

সোমবার দুপুরেও রামপুরায় রাইদা পরিবহনের ৪০টি বাস আটক করেছিল ইম্পিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক সহপাঠীকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ওই বাসগুলো আটকেছিল তারা।

পরে পুলিশের উপস্থিতিতে বাস মালিকদের সঙ্গে সমঝোতায় বিকালে বাসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।