প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মূল চক্রান্ত ছিল তারেক রহমানের, আর এতে তার মা খালেদা জিয়ারও সমর্থন ছিল।
Published : 22 Aug 2021, 02:22 AM
একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার সপ্তদশ বার্ষিকীতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের ওই হামলার পটভূমি, তার উদ্দেশ্য, কারা সেই হামলা চালিয়েছিল, নেপথ্যে ছিল কারা, তা নিয়ে সবিস্তারে কথা বলেন।
‘ফিরে দেখা: ভয়াল ২১শে অগাস্ট’ শীর্ষক সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে শনিবার প্রচারিত হয়। এই সাক্ষাৎকার নেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার নজরুল ইসলাম।
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রায় গ্রেনেড হামলা হলে দলের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হন।
গ্রেনেড হামলায় রক্তাক্ত নেতা-কর্মীরা
বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই যে এই হামলা হয়েছিল এবং তাতে তখনকার ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত জোটের শীর্ষ নেতাদের যে প্রত্যক্ষ মদদ ছিল তা মামলার তদন্তে উঠে আসে।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে জিয়াউর রহমানের আমলে নানা বাধা-হামলার মুখ পড়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যার সাথে যে জিয়াউর রহমান জড়িত এবং তার স্ত্রী (খালেদা জিয়া) যে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে এবং ছেলেকেও সেই একই পথে নামিয়েছে, এটা তো স্পষ্ট।”
ওই হামলার আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কয়েকটি বক্তব্য মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সে বক্তৃতা দিল যে আওয়ামী লীগ একশ’ বছরেও কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না, আরেকবার আরেক বক্তৃতায় বলল যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারবে না। এই যে তার বক্তব্য এর মধ্য থেকেই তো বোঝা যায় যে তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল। আর এর সঙ্গে যে সরকারের সবাই জড়িত ছিল, এটা তো খুব স্পষ্ট।”
খালেদার সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তখনকার ডিজিএফআই, এনএসআই, পুলিশের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“তাদেরকে নিয়েই কিন্তু এ সমস্তই চক্রান্তটা করে এবং সব থেকে বড় কথা হচ্ছে তার ছেলে তারেক রহমান। সে তো দীর্ঘদিন এই ষড়যন্ত্র তৈরি করা এবং এটাকে কার্যকর করার জন্য সব থেকে মুখ্য ভূমিকা তো সে তৈরি করেছে। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই তার পেছনে ছিল এবং তাকে সমর্থন দিয়েছে।”
একুশে অগাস্টের মামলার ৪৯ আসামির মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ঢাকার দ্রুত বিচার টাইব্যুনাল।
আর খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এছাড়া ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। সব প্রস্তুতি শেষে মামলাটি এখন হাই কোর্টে আপিল শুনানির অপেক্ষায় আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে আমি আরেকটা কথা আমি বলে রাখি এই ঘটনার আগে তারেক জিয়া কিন্তু ৫ নম্বর রোডে (ধানমণ্ডি) তার যে শ্বশুরবাড়ি, সেই বাড়িতে কিন্তু অবস্থান করেছে অনেকদিন বা কয়েকমাস। আর ঠিক অগাস্টের আগে সে ওই বাড়ি ছেড়ে আবার চলে যায় ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে। এবং তখন আমার কাছে একটা খবর ছিল যে এই জায়গায় বসে সে কিছু একটা ঘোঁট পাকাচ্ছে।”
হামলাস্থলে পাওয়া গ্রেনেড নষ্ট করা, সব আলামত ধ্বংস করা, তদন্তের নামে প্রহসন, সংসদে এ নিয়ে কথা বলতে না দেওয়ার ঘটনাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, “সেই (অবিস্ফোরিত) গ্রেনেডটা সেনা অফিসার একজন নিয়ে যায় এবং তার একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল এটা এটা রেখে দিতে হবে, কারণ এটা এই মামলায় কাজে লাগবে। কিন্তু এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমি শুনেছি যে খালেদা জিয়া নিজেই তাকে ধমক দিয়েছে যে না এটা করা যাবে না এবং এটাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
হামলাস্থলে পড়ে ছিল গ্রেনেড
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “দিনের বেলায় একটা রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্য জনসভায় এই ধরনের হামলা আমার মনে হয় এটা পৃথিবীতে কোনোদিন হয়নি। এটা রণক্ষেত্রে, যুদ্ধ ক্ষেত্রে যা ব্যবহার করে, তা তারা ব্যবহার করলো সাধারণ মানুষের উপর, একটা দলের উপর।”
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এই চক্রান্তে যুক্ত ছিলেন, বলেন শেখ হাসিনা।
“বিএনপি আমলে তো একটা সন্ত্রাসী দেশ করেই ফেলেছিল এবং এতে বহু লোক চলে যায় আফগানিস্তানে। তালেবানের ট্রেনিং নিয়ে। সেই মুফতি হান্নান নিজেই তো ট্রেনিং নিয়ে আসছে। তারপর এই তাজউদ্দিন, সেও তো ট্রেনিং নেওয়া। এ তো সব বিএনপির লোক। তাজউদ্দিন তো বিএনপির খাস এবং গ্রেনেড হামলার পর পর ওইদিন রাত ১১টার সময় চারজনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে তুলে দেয়। বিশেষ ব্যবস্থায় তারা চলে যায় এবং সেখানে কিন্তু ডালিম আর রশীদও (বঙ্গবন্ধুর খুনি) ছিল।”