নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন কামাল হোসেন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য অটুট আছে বলে দাবি করলেও নিজের দলের নির্বাচিত দুজনের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া না নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2019, 01:29 PM
Updated : 30 Jan 2019, 01:37 PM

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর বুধবার দলীয় এক সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট শতভাগ ঐক্যবদ্ধ আছে। আমাদের ফ্রন্ট হলো হল ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে। সেই ঐক্য অবশ্যই আছে।

“আমি তা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখেছি। রাস্তায় আমরা হাটি। দেখুন জিজ্ঞাসা করুন, এই দেশের মালিক জনগণ কি না। কেউ একজন কি বলবে ‘না’?”

কামাল হোসেন সিঙ্গাপুর থাকাকালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী তার দলের দুই নেতা সুলতান মো. মনসুর আহমেদ ও মোকাব্বির খান শপথ নেবেন বলে ঘোষণা দেন। গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে জয়ী হন তারা, যে নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে ঐক্যফ্রন্ট ও তাদের শরিক বিএনপি।  

‘নির্দলীয়’ সরকারের অধীনে পুনঃভোটের দাবি জানানো বিএনপির নির্বাচিত ছয় নেতাও শপথ নেবেন না বলে দলটির নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন।

এই প্রেক্ষাপটে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া গণফোরামের দুই নেতার শপথ গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন বলেন, “এই ঐক্য তো আমাদের মধ্যে আছেই। এটা আরো সুদৃঢ়। এক নম্বর আমাদের কথা হল-জনগণ ক্ষমতার মালিক, জনগণ জাতীয় সম্পদের মালিক, জনগণ আইনের শাসন চায়- চলেন না আমরা পরীক্ষা করে দেখি সেই ঐক্য আছে কি না। অবশ্যই আছে।”

ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য নিয়ে উচ্চস্বরে কথা বললেও দলের নেতারা সদস্য সংসদ হিসেবে শপথ নেবেন কি না, সে প্রশ্ন করা হলে জবাব এড়িয়ে যান গণফোরাম সভাপতি।

তিনি বলেন, “এটা এখানে বলার ইস্যু নয়। এ বিষয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলনে পরে বলব। এই মুহূর্তে আমরা জাতীয় ঐক্যকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার কথা বলছি।”

কামাল হোসেন যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন চলছিল।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই সংসদের ব্যাপারে সব কিছু জেনে বিচার-বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে আমরা বক্তব্য রাখব।” 

গণফোরামের পঞ্চম কাউন্সিল উপলক্ষে বিকালে প্রস্তুতি সভায় বক্তব্যে নেতাকর্মীদের জনগণের সম্পদের ‘পাহারাদার’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, “দেশের সম্পদ কেউ যাতে আত্মসাৎ করতে না পারে, অপচয় করতে না পারে সেজন্য আমাদের জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। নানা রকমের যেসব অশুভ শক্তি আছে, অশুভ শক্তির তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকতে হবে, গণবিরোধী শক্তি যারা সম্পদ আত্মসাৎ করতে চায় তাদের ব্যাপারে আমাদের সংগঠিত হতে হবে।

“সংগঠিত জনগণকে দিয়ে জনগণের মালিকানা রক্ষা করা যাবে, জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে।”

তৃণমূল পর্যায় থেবে দলকে সংগঠিত করার আহ্বান জানান গণফোরাম প্রধান।

কাউন্সিল নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ঐক্যের লক্ষ্য হল- সবাইকে নিয়ে আমরা শক্তি সঞ্চয় করব, সংগঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেব। জাতীয় ঐক্যমত যেগুলো আছে তাকে নিয়ে ঐক্য গড়ে তোলা হবে।

“জেলায় জেলায়, থানায় থানায়, ইউনিয়ন ইউনিয়নে গিয়ে দলকে সংগঠিত করা হবে, জনগণকে সংগঠিত করা হবে।”

আগামী ২৩ ও ২৪ মার্চ ঢাকায় গণফেরামের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওম শফিকউল্লাহর পরিচালরায় এই প্রস্তুতি সভায় দলের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজা কিবরিয়া, অধ্যাপক আবু সাঈয়িদ, মোকাব্বির খান বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে মোস্তাক আহমেদ, মফিজুল ইসলাম খান কামাল, এসএম আলতাফ হোসেন, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আইয়ুব খান ফারুক, রফিকুল ইসলাম পথিক, রওশন ইয়াজদানি, মাহবুব হোসেন, কাজী হাবিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশে আছেন।

সভায় সুব্রত চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং আওম শফিকউল্লাহকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্যের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে।