শপথ: সুলতান মনসুর ‘ইতিবাচক’, গণফোরামের ‘না’

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জয়ী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মো. মনসুর আহমেদ শপথ নেওয়ার ইংগিত দিলেও তার সঙ্গে একমত নয় তার দল গণফোরাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2019, 11:05 AM
Updated : 28 Jan 2019, 02:44 PM

মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে নির্বাচিত সুলতান মনসুর সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে বলার কি আছে। এটা তো ইতিবাচক হবেই!”

সিলেট-২ আসনে বিজয়ী গণফোরামের প্রার্থী মুকাব্বির খানও ‘শপথ নেবেন’ বলে জানিয়েছেন সুলতান মনসুর; তবে শপথের সম্ভাব্য কোনো দিন তারিখ তিনি বলেননি।

সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “জনগণ শত প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। জনগণের পক্ষে ভূমিকা রাখা আমার দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে আমার ভূমিকা আগের মতই ইতিবাচক থাকবে।”

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সুলতান মনসুর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও সিলেট-২ আসনে বিজয়ী মুকাব্বির খান দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়েই ভোট করেন। শপথ নেওয়ার বিষয়ে মুকাব্বির খানের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।

তবে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলছেন, সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে তারা এখনও অটল। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সুলতান মো. মনুসর আহমেদ ও মোকাব্বির খান দুজনই গণফোরামের প্রেসিডিয়ামের সদস্য, দুজনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। সেভাবেই নির্বাচন হয়েছে। একজন ধানের শীষ নিয়েছেন, আরেকজন সুযোগ পায়নি আমাদের দলীয় প্রতীকে করেছেন ঐক্যফ্রন্টের সমর্থনে।’

“এখন আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে সংসদে না যাওয়ার, শপথ না নেওয়ার। এর পরে কী ব্যত্যয় ঘটবে সেটা আমাকে জিজ্ঞাসা না করে উনাদের (দুইজন) জিজ্ঞাসা করুন।”

জোটের অব্স্থানের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সুলতান মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। ড. কামাল হোসেন আগেই বলেছেন, শপথের ব্যাপারটিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

“এখন ঐক্যফ্রন্ট কী করবে, তা বলতে পারবেন কেবল কামাল হোসেন। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।”

এবারের নির্বাচনে ২৫৭টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করেছে। অন্যদিকে বিএনপিকে নিয়ে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র আটটি আসন। 

ভরাডুবির এই ভোটে বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনুর রশিদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আব্দুস সাত্তার ভূঞা জয়ী হতে পেরেছেন।

৩০ ডিসেম্বর ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে ঐক্যফ্রন্ট নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাতে সাড়া দেয়নি, বিএনপির নির্বাচিতরাও আর শপথ নেননি। 

সরকার গঠনের পর শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে বিভেদ ভুলে ‘জাতীয় ঐক্যের’ আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংখ্যায় ‘কম হলেও’ বিএনপির নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের প্রস্তাব ও সমালোচনার ‘যথাযথ মূল্যায়ন’ করা হবে।

কিন্তু ওই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এই মুহূর্তে সংসদে যাওয়ার বা শপথ নেওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না।”

আগামী ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি থেকে একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হবে।

নিয়ম অনুযায়ী, তার পরের ৯০ দিনের মধ্যে কেউ শপথ নিয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর না করলে তার আসন শূন্য ঘোষণা করে সেখানে উপ-নির্বাচন দেওয়া হবে।

গণফোরামের বিবৃতি

গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়কারী মোস্তফা মোহসীন মন্টু এক বিবৃতিতে বলেন, “একটি অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তথা জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য সুদৃঢ় ও অটুট আছে।”

তিনি বলেন, “গণফোরাম তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন কোন নির্বাচিত সংসদ সদস্য সংসদে যোগদান করছে- এ ধরণের সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যা অসত্য ও ভিত্তিহীন। সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয় নাই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোন সংসদ সদস্য শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত বহাল আছে।”

পত্র-পত্রিকায় ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বক্তব্য না দিতে সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।