শপথ নেই তো বেতনও নেই ঐক্যফ্রন্টের ৮ ‘এমপির’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পাওয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আটজনকে সংসদ সদস্যের মর্যাদা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হলেও শপথ না নেওয়া পর্যন্ত তারা কোনো সরকারি সুবিধা পাবেন না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকশহীদুল ইসলাম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2019, 02:43 PM
Updated : 14 Jan 2019, 02:44 PM

সংসদ সদস্য হিসেবে গেজেটে নাম থাকায় তাদের ‘এমপি’ হিসেবে ধরা হলেও তাদের সংসদ সদস্য পদ শপথ নেওয়ার পরই কার্যকর হবে বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) নিতিশ চন্দ্র সরকার সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শপথ না নিলে তারা বেতন-ভাতা পাবেন না। যেদিন তারা শপথ নেবেন সেদিন থেকেই বেতন-ভাতা পাবেন।”

এবারের নির্বাচনে ২৫৭টি আসন পাওয়া আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয়ে টানা তৃতীয়বারের মত সরকার গঠন করেছে।

বিএনপি ও শরিকদের ভরাডুবির এই ভোটে ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বগুড়া-৪ আসনে মোশারফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে জাহিদুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে হারুনুর রশিদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আব্দুস সাত্তার ভূঞা জয়ী হয়েছেন।

আর মৌলভীবাজার-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ধানের শীষ প্রতীকে এবং সিলেট-২ আসনে গণফোরামের মুকাব্বির খান উদীয়মান সূর্য নিয়ে জিতেছেন।

ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ করে আসা ঐক্যফ্রন্ট ঘোষণা দিয়েছে, তাদের নির্বাচিতরা সংসদে গিয়ে শপথ নেবেন না।

অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে তাদের শপথ নিয়ে সংসদে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

নির্বাচনে অল্প আসন পেলেও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপির সংসদে আসা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ আগেই জানিয়েছেন, ভোটে নির্বাচিত কেউ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তার আসন শূন্য হয়ে যাবে

আগামী ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি থেকে একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হবে। তার পরের ৯০ দিনের মধ্যে কেউ শপথ নিয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর না করলে তার আসন শূন্য ঘোষণা করে সেখানে উপ-নির্বাচন দেওয়া হবে।

তবে ভোটে জিতে এখনও যারা শপথ নেননি, সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিন পর্যন্ত তাদের ‘স্ট্যাটাস’ এমপিই থাকবে বলে সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব নিতিশ চন্দ্র জানান।

তিনি বলেন, “গেজেটে নাম আসায় তাদের স্ট্যাটাস এখন এমপি। কিন্তু যখন তারা শপথ নেবেন, তখন থেকে এটা কার্যকর হবে।”

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির আব্দুস সাত্তার ভূঞা জয়ী ঘোষণা করে গত ১৩ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। আর ঐক্যফ্রন্টের সাত প্রার্থীসহ ২৯৮ প্রার্থীকে সংসদ সদস্য পদে জয়ী দেখিয়ে গত ১ জানুয়ারি গেজেট হয়েছে।

দশম সংসদের মেয়াদ ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব নিতিশ চন্দ্র বলেন, “একটা নির্বাচনী এলাকায়তো দুজন (এমপি) থাকেন না। তারপরেও যেহেতু শথন নেননি, আগেরজনও আছেন, এ কারণে ৩০ জানুয়ারি সংসদ আহ্বান করা হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হলে তারপর অধিবেশন ডাকা হয়েছে।”

কী সুবিধা পান এমপিরা

২০১৬ সালের ৫ মে সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করার বিল অর্থাৎ, মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (রেমুনেরেশন অ্যান্ড অ্যালাউয়েন্সেস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল’ জাতীয় সংসদে পাস হয়।

এর ফলে এমপিদের বেতন ২৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫ হাজার টাকা দাঁড়িয়েছে; সঙ্গে বেড়েছে অন্যান্য ভাতাও।

বেতনের বাইরে একজন সংসদ সদস্য পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় নিয়ামক ভাতা, ৭৫০ টাকা দৈনিক ভাতা, পাঁচ লাখ টাকা স্বেচ্ছাধীন তহবিল, সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্বাচনী এলাকার মাসিক খরচ, মাসে ৭০ হাজার টাকা পরিবহন খরচ, ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বার্ষিক ভ্রমণ খরচ, দেড় হাজার টাকা মাসিক লন্ড্রি ভাতা, ৬ হাজার টাকা মাসিক ক্রোকারিজ ভাতা এবং নির্বাচনী এলাকার অফিস খরচ বাবদ মাসে ১৫ হাজার টাকা করে পান।

পুনঃভোটের সুযোগ ‘আর নেই’

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে গত ৩ জানুয়ারি ইসিতে স্মারকলিপি দিয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ওই ফলাফল বাতিল করে অবলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে পুনঃভোটের দাবি জানিয়েছিল তারা।

এরপর ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ইসিতে পাল্টা স্মারকলিপি দেয়। নির্বাচন নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করা হয় সেখানে।

সোমবার নির্বাচন কমিশনের সভায় দুই স্মারকলিপি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “ভোট শেষে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে ফেলেছি আমরা, এখন আর কিছু করার সুযোগ নেই।”

তিনি বলেন, “কমিশন ঐক্যফ্যন্ট ও আওয়ামী লীগের চিঠি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেছেন। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বাতিল, নির্দলীয় ও তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে পুননির্বাচন দাবি করেছে।… সংক্ষুব্ধ হলে যে কেউ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মামলা করতে পারে।”

[প্রতিবেদনটি তৈরি করতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মঈনুল হক চৌধুরী]