খালেদার প্রার্থিতা: নতুন বেঞ্চের প্রতি আইনজীবীদের অনাস্থা

প্রার্থিতা ফিরে পেতে খালেদা জিয়ার তিনটি রিট আবেদনের শুনানি করতে প্রধান বিচারপতির ঠিক করে দেওয়া বেঞ্চের প্রতি অনাস্থা জনিয়েছেন তার আইনজীবীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2018, 10:35 AM
Updated : 13 Dec 2018, 10:35 AM

খালেদা জিয়ার মনোনয়নের বৈধতা প্রশ্নে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে বিভক্ত আদেশ হওয়ার পর বুধবার হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বে একক বেঞ্চ গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় ওই বেঞ্চে মামলা তিনটির শুনানি শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী মৌখিকভাবে অনাস্থা জানান। বিচারক তখন শুনানি মুলতবি করে দেন।

শুনানির শুরুতেই এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, “ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে আপনার আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা নেই।”

বিচারক তখন এ জে মোহাম্মদ আলীকে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “আপনারা তো এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে জানাতে পারতেন।”

এ জে মোহাম্মদ আলী তখন বলেন, “আমাদের কিছু করার ছিল না। আমরা দেখেছি যে বেলা ২টায় এই আদালতে মামলার শুনানি হবে। যা বলার এই আদালতেই বলতে হবে।”

এ পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানিতে আসা অ্যাটর্নি জেনালেন মাহবুবে আলম বলেন, “উনারা এ কথা এ আদালতে বলতে পারেন না। প্রধান বিচারপতিকে বলতে পারতেন। কালক্ষেপণের কৌশল থেকে এই অনাস্থা জানিয়েছেন।“

এর জবাবে মোহাম্মদ অলী বলেন, “আমরা হলাম সংক্ষুব্ধ পক্ষ। আমাদের আর্জেন্সি বেশি। উনি (অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম) তো রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল। এ মামলায় উনার এত মাথাব্যথার কারণ কী? উনি ব্যক্তি মাহবুবে আলম হিসেবে দাঁড়াতে পারেন।”

বিচারক তখন বলেন, “উনি ব্যক্তি মাহবুবে আলম হিসেবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।”

এ পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী বৃহস্পতিবার বিষয়টির শুনানি না করার আরজি জানালে আদালত তাতে সম্মতি দেয়।

পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল সাংবাদিকদের বলেন, “নিয়ম হচ্ছে বিভক্ত আদেশ দেওয়া বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি যিনি থাকেন তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ কোনো বিচারপতিকে দিয়ে একক বেঞ্চ গঠন হবে।

“বিভক্ত আদেশ দেওয়া বেঞ্চে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সিনিয়র বিচারপতি। কিন্তু প্রধান বিচারপতি বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসানকে দিয়ে একক বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন। তিনি বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কনিষ্ঠ। যে কারণে আমরা অনাস্থা জানিয়েছিলাম। আদালত লিখিতভাবে আবেদন করতে বলে সোমবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রেখেছে।”

তবে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মাহবুবে আলম দাবি করেছেন, খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালতের প্রতি অনাস্থা দেননি। 
 
“আবেদনটি খারিজ হবে জেনেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা টালবাহানা শুরু করেছেন। কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন লোকেরা জানেন, দণ্ডিতরা নির্বাচন করতে পারছেন না। সেখানে খালেদা জিয়া কীভাবে নির্বাচন করবেন?”
 
যে বেঞ্চ বিভক্ত আদেশ দিয়েছে তার চেয়ে জ্যেষ্ঠ বেঞ্চে বিষয়টি নিষ্পত্তির যে দাবি তুলেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সে বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছেন মাহবুবে আলম। 
 
তিনি বলেন, “এ ধরনের কোনো আইন নাই বা সুপ্রিম কোর্টেরও বিধি নাই। প্রধান বিচারপতি নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য এই বেঞ্চকে এখতিয়ার দিয়েছেন। এ কারণে খালেদা জিয়ার মামলা তিনটিও এই বেঞ্চে পাঠিয়েছেন নিষ্পত্তির জন্য।” 

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তাকে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী করেছিল বিএনপি।

কিন্তু নভেম্বরের শেষে হাই কোর্টে এক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।

এরপর ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে দুই বছরের বেশি সাজার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করে দেওয়া হয়। খালেদার আইনজীবীরা ওই সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও বিফল হন। এরপর তারা রিট আবেদন নিয়ে আসেন হাই কোর্টে।

কিন্তু বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্রের বৈধতা প্রশ্নে বিভক্ত আদেশ দেয়। নিয়ম অনুযায়ী মামলার নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হলে তিনি হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি জে বি এম হাসানকে ওই তিন আবেদন নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেন।

বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ইসিকে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন। খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

অন্যদিকে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে খালেদার ভোটের ভাগ্য আটকে যায়।