হাই কোর্টে বিভক্ত আদেশে ঝুলে থাকল খালেদার ভোট ভাগ্য

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নে বিভক্ত আদেশ এসেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2018, 05:20 AM
Updated : 11 Dec 2018, 10:46 AM

ফলে প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা প্রচারে নেমে গেলেও কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার ভোটের পথ খুললো না।

তিনটি আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চে ওই আবেদনের ওপর শুনানি করে মঙ্গলবার বিভক্ত আদেশ দেয়।

বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ইসিকে খালেদা জিয়ার মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিতয়ে রুল জারি করেন। খালেদার মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

অন্যদিকে বিচারপতি মো. ইকবাল কবির এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে খালেদার ভোটের ভাগ্য আটকে যায়।

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু দুইজন বিচারপতি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি, সেজন্য এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি পরবর্তী বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন। আইনগত অবস্থা যা দাঁড়াল, এখন পর্যন্ত উনি (খালেদা জিয়া) কোনো আদেশ প্রাপ্ত হননি।”

রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা দাবি করেন, দুই বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত হলে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না- এটা মীমাংসিত বিষয়।

“আমি তো প্রথম থেকেই বলে আসছি কোনো আদালত এ রকম আদেশ দিতে পারেন না, যে আদেশের ফলে সংবিধানের একটি বিধান অকার্যকর হয়ে যায়।”

খালেদার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই পক্ষপাতিত্ব করছে, ঠুঁটো জগন্নাথ পরিণত হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে এসেছিলাম। প্রিজাইডিং জাজ নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে তিনটি মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার নির্দেশ দিলেও বেঞ্চের অপর বিচারপতি দ্বিমত পোষণ করেছেন।”

নিয়ম অনুযায়ী এ মামলার নথিপত্র এখন প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হবে জানিয়ে কায়সার কামাল বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করছি, তৃতীয় বেঞ্চে আমরা ন্যায় বিচার পাব, সঠিক সিদ্ধান্ত পাব।”

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরের দণ্ড নিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নেতারা আশা করছিলেন, রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে তিনি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সে অনুযায়ী তাকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ এবং বগুড়া-৬ ও ৭ আসনে প্রার্থী করেছিল বিএনপি। তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা।

কিন্তু নভেম্বরের শেষে হাই কোর্টে এক মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারও দুই বছরের বেশি সাজা বা দণ্ড হলে সেই দণ্ড বা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপিলে ওই দণ্ড বাতিল বা স্থগিত হয়।

এর ফলে খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতার আপিল করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ আটকে যায়।

এরপর ২ ডিসেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে দুই বছরের বেশি সাজার কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বাতিল করে দেওয়া হয়। খালেদার আইনজীবীরা ওই সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও বিফল হন। এরপর তারা রিট আবেদন নিয়ে আসেন হাই কোর্টে।

এদিকে দণ্ডের কারণে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু হাই কোর্টে আবেদন করে প্রার্থিতা ফিরে পান সোমবার। একই দিনে খালেদা জিয়ার আবেদনের ওপর হাই কোর্টে শুনানি হয়।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ইলেকশন এক্সপার্ট মিশনের’ আইনজ্ঞ ইরিনি- মারিয়া গোনারিও শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, সরকারই তাদের নেত্রীর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছে। প্রার্থিতা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে খালেদার তিন আসনে বিকল্প প্রার্থীও দিয়ে রেখেছে দলটি।  

খালেদার বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া-৭ এ প্রার্থী করা হয়েছে মোরশেদ মিলটনকে। খালেদার পৈত্রিক এলাকা ফেনী-১ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মুন্সী রফিকুল আলমকে।