জামালপুর-১ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী রশিদুজ্জামান মিল্লাত ৯৩ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ৭৩ হাজার ভোট পেয়ে হারতে হয়েছিল আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদকে।
Published : 10 Dec 2018, 09:08 AM
ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এম এ সাত্তার ৩৪ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ভোট যোগ করলে হারতে হয় বিএনপির প্রার্থীকে।
দুই দল জোট বাঁধলেও এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের বাইরে গিয়ে জাতীয় পার্টি প্রায় দেড়শ আসনে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
সেই জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ) আসনে এবারও আওয়ামী লীগের আবুল কালাম আজাদই নৌকার প্রার্থী; কিন্তু জাতীয় পার্টিও লাঙ্গল প্রতীকে প্রার্থী করেছে আব্দুস সাত্তারকে। ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে হারের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা উঁকিঝুকি দিচ্ছে।
বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয় রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে লাঙ্গলের প্রার্থী দিলে জোট করার মানে কী বুঝি না। জোট করলে আবার জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিবে কেন?”
“নৌকার বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টি এই আসনে নির্বাচন করলে আমাদের প্রার্থীর ক্ষতি হবে,” বলেন তিনি।
গত ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধে চলা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ এবার আওয়ামী লীগের কাছে ৫০টির মতো আসন পাওয়ার আশায় ছিলেন।
কিন্তু শেষে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ তাদের জন্য আসন রেখেছে ২৬টি; যদিও জাতীয় পার্টি নেতারা বলছেন, ২৯টি আসন মহাজোট থেকে পেয়েছেন তারা।
এরপর জাতীয় পার্টি অন্তত ১৬১ আসনে তাদের প্রার্থী তালিকা পাঠিয়ে দেয় ইসিতে; আবার এই তালিকা ১৭২ জনের বলেও বক্তব্য আসে দলটির নেতাদেরই মধ্য থেকে।
ফলে প্রায় দেড়শ আসনে আওয়ামী লীগ কিংবা তাদের জোট শরিক দলের নেতাদের ভোটে ভাগ বসাতে পারে লাঙ্গলের প্রার্থীরা; যা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে তৃণমূলে।
ঢাকা বিভাগের নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে ৬১ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূইয়া। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুর রহমান আলী ৪৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। যেখানে জাতীয় পার্টির শাহজাহান সাজু ১৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন।
জোটের বাইরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেওয়ায় দলের ক্ষতি হবে বলে মনে করেন শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের আসনে জাতীয় পার্টির তো ১০ -১৫ হাজার ভোট আছে। এগুলো এখন তো আর নৌকা পাবে না। এতে তো আমাদের প্রার্থীর ক্ষতি হবে।”
রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে ২০০১ সালে বিএনপির মোত্তালিব আকন্দ ৯৬ হাজার ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হোসেন প্রধান পেয়েছিলেন ৭৫ হাজার ভোট; আর জাতীয় পার্টির লুৎফর রহমান চৌধুরী পেয়েছিলেন ৬৭ হাজার ভোট।
এই রকম বেশ অনেকগুলো আসন রয়েছে, যেখানে জাতীয় পার্টির ভোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগ হলে বিএনপিকে হারতে হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এই কৌশল ফল দিয়েছিল; ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি না থাকায় দুই দল আলাদাভাবে ভোট করলেও তাতেও সমঝোতা ছিল।
কিন্তু এবার মহাজোটে থেকেও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী দেওয়ার ভূমিকার ব্যাখ্যায় দলটির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের সমস্যা হলেও তাদের অনেক প্রার্থী হওয়ায় সামাল দেওয়া যাচ্ছিল না।
“প্রতিটি আসনে আমাদের অনেক প্রার্থী রয়েছে। এটা নিয়ে একটু অসুবিধা হচ্ছিল। আমাদের বিবেচনায় ছিল, আমাদের প্রার্থী দাঁড়ালে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
“পরে মহাজোট থেকে সিদ্ধান্ত আসল, ঠিক আছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। এসব বিবেচনায় দুই দলই যেন দুদলের সহযোগিতা পায়, সেটা বিবেচনা করে আসন ওপেন রাখা হয়েছে।”
রাঙ্গাঁ মনে করছেন, ১৩২টি আসন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় মহাজোটের দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ‘লাভবান হবে’।
জাতীয় পার্টির এত প্রার্থীর বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জোটের বাইরে অনেক শরিকরাই নির্বাচন করছে। এটা আমাদের জোটগত সিদ্ধান্ত।”
এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “আমরা জোটগতভাবে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছি। এর বাইরে কারা, কীভাবে ভোট করবে, সেটা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই।”
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের বাজারের কথা এখন তো বোঝা যাবে না, তাই এখনই এই বিষয়টা নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।”