আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিএনপির জন্য ‘শেষ সুযোগ’ হিসেবে বর্ণনা করে নেতাকর্মীদের ‘লড়াই করে ভোট’ দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন মওদুদ আহমদ।
Published : 23 Nov 2018, 02:23 PM
শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেছেন, এবার ভোট সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশ আগামীতে ‘একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে’ পরিণত হবে।
নাগরিক আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় মওদুদ বলেন, “এবার শেষ চান্স, শেষ পরীক্ষা। দরকার হলে আপনাদেরকে লড়াই করে ভোট দিতে হবে। অর্থাৎ যারা আপনাদেরকে বাধা দেবে, তাদেরকে প্রতিহত করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না।”
মওদুদের ভাষায়, বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকরা যদি ধানের শীষের পক্ষে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ভোট কেন্দ্রে যান, কেউ বাধা দিলে জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি থাকেন, তাহলে ‘বিজয় সুনিশ্চিত’।
৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, তাতে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা এবং ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রত্যাহার করা যাবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘যে কোনো প্রকারে’ জয় পেতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে অভিযোগ করে বিএনপি কর্মীদের ভোটের দিন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন দলটির নেতারা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার কথা বলে বিএনপি ‘গৃহযুদ্ধের উসকানি’ দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বিএনপি নেতা মওদুদ বলেন, “আমরা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব বলে ঘোষণা দিলাম, তখন মাঠ পর্যায়ে দেখা গেল তাদের গোয়েন্দা সংস্থার যেসব রিপোর্ট দিয়েছে… একটা রিপোর্টেও বলেনি যে, তারা জয়লাভ করবে নির্বাচনে। তারা ডেসপারেট হয়ে গেছে, বেপরোয়া হয়ে গেছে।
“তারা ধানের শীষের জোয়ারকে ভয় পাচ্ছে। আমি বলতে চাই, ধানের শীষের জোয়ার যখন আসবে, তাদের (সরকার) সমস্ত পরিকল্পনা, সমস্ত নীল-নকশা ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। দেশের মানুষের মনের যে ইচ্ছা,সেই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে।”
‘নখদন্তহীন’ নির্বাচন কমিশন
তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের কার্য্ক্রমের সমালোচনা করে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ আলোচনা সভায় বলেন, সাংবিধানিক এ সংস্থাটি এখন ‘সরকারের অঙ্গ সংগঠনে’ পরিণত হয়েছে।
“তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে, এখন সব কিছু নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন কমিশনের কাছে কিছুই নাই। এটা দন্তবিহীন একটি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের একেবারে শুধু তল্পিবাহকই নয়, সরকারের একটি অঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করছে।”
গণভবনের সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মীদের হয়রানীমূলক মামলা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও এলাকায় এলাকায় এখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের ‘হয় গ্রেপ্তার, নয়ত ঘরছাড়া’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মওদুদ।
তিনি বলেন, “আমরা সব সময় শুনে এসেছিলাম তফসিল ঘোষণার পরে সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধিনে আসবে। আজকে সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আজকে দেখা যাচ্ছে এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
“রিটার্নিং অফিসার, যাদের নিরপেক্ষ থাকার কথা, তাদের নির্বাচন কমিশন ডাকলেন সভা করলেন এবং তার পরপরই তাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে সভা করা হল। ইসি কোনো প্রতিবাদ করে নাই। কারণ নির্বাচন কমিশন ও সরকার তো এক, তাদের লক্ষ্য একই- কেমন করে আওয়ামী লীগকে আবার জয়ী করা যায়।”
সরকারের উপদেষ্টারা সাবেক সচিবদের দিয়ে প্রশাসনকে ‘প্রভাবিত’ করছে বলেও অভিযোগ করেন মওদুদ।
“আজকে অতিরিক্ত সচিব ৩৭ না ৪৩ জনকে তারা বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ করেছেন উন্নয়নের নামে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শনের জন্য। হঠাৎ করে কেন এটার প্রয়োজন পড়ল? আসলে তা না, নির্বাচনী প্রক্রিয়া কীভাবে প্রভাবিত করা যায়, ওই ডিসির ওপর চাপ রাখার জন্য ওই অতিরিক্ত সচিবদের সেখানে পাঠানো হয়েছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক আন্দোলন ফোরামের সভাপতি একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সাবিরা নাজমুল, ফরিদ উদ্দিন, কাজী মনিরুজ্জামান, একেএম রেজাউল করীম, ইকবাল হোসেন, এম এ হালিম আলোচনায় অংশ নেন।