ভোটের বছরের শুরুতে দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগেই হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহ পরান (র.) এর মাজার জিয়ারত করতে সিলেটে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 05 Feb 2018, 04:09 PM
সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি সিলেট সার্কিট হাউজে পৌঁছালে জেলা বিএনপির নেতারা তাকে স্বাগত জানান।
সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন শাহজালাল ও শাহপরানের মাজার জিয়ারত করবেন। জিয়ারত শেষে রাতেই তার ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।
পাঁচ বছর পর সিলেটে তার এই সফরে জনসভার মত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি রাখা হয়নি।
সকালে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর আগে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার এই সফর শুধুই জিয়ারতের উদ্দেশ্যে, নির্বাচনী প্রচারের জন্য নয়।
“এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করা হয়নি, সেখানে নির্বাচনী প্রচার কীভাবে হবে?”
সকাল সোয়া ৯টায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে খালেদার গাড়িবহর যাত্রা শুরু করে। খালেদা বসেন গাড়ির সামনে, চালকের পাশের আসনে, যা সচরাচর দেখা যায় না।
গাড়িবহর সিলেটে যাওয়ার পথে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার পাশাপাশি ধরপাকড়ও করা হয় বলে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ।
খালেদার গাড়িবহর নারায়ণগঞ্জ পার হওয়ার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে আটক করা হয় মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান ও সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ দশ জনকে।
নরসিংদীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়াকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, নরসিংদীর ভেলানগর ও কামারটেকের কাছে রাস্তায় থাকা বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
গত ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সিলেটে গিয়ে মাজার জিয়ারত করে জনসভায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্রাকনির্বাচনী প্রচার শুরু করেন।
আমীর খসরু অভিযোগ করেন, সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি না করে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের শরিকরা ‘এককভাবে’ নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে।
খালেদা জিয়া সর্বশেষ সিলেটে গিয়েছিলেন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর। সে সময় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন, যদিও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বিএনপি বর্জন করে।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
এই পস্থিতিতে শনিবার ঢাকায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির চার শতাধিক সদস্যের সঙ্গে সভা করেন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের অভয় দেওয়ার পাশাপাশি ‘যে কোনো বিপদ মোকাবিলায়’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
অন্যদিকে বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূলের নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে ওই রায় খালেদা জিয়ার বিপক্ষে গেলে বিএনপিকে কর্মসূচি দিতেই হবে। তবে সেই আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও সক্রিয় করতে হবে।
নির্বাহী কমিটির সঙ্গে সভার পর রোববার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বৈঠকের আলোচনা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি রায় পরবর্তী করণীয় অর্থাৎ আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচি কী হতে পারে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।