চট্টগ্রাম নগর আ. লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব চৌধুরী

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2017, 09:26 AM
Updated : 10 Sept 2020, 03:35 PM

মাহতাব চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর প্রয়াত জহুর আহমদ চৌধুরীর মেজ ছেলে। চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জহুর আহমদ চৌধুরীর পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সখ্যতা দীর্ঘদিনের।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর বার্ষিক কুচকাওয়াজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম নগর কমিটির দায়িত্ব মাহতাবকে দেওয়ার বিষয়টি জানান।

জহুর আহমদ চৌধুরীর তৃতীয় ছেলে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নগর কমিটি এমনিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ। যতদিন নতুন কমিটি বা সম্মেলন না হবে, ততদিন মাহতাব ভাইকেই সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন।”

গতবার কমিটি দেওয়ার পরও ‘সুন্দর পরিবেশ’ সৃষ্টি না হওয়ায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ‘মনঃক্ষুণ্ন’ জানিয়ে তুফান বলেন, “নেত্রী বলেছেন, ‘মাহতাব ভাইকে বলবে সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে যাতে কাজ করে’।”

জহুর আহমদ চৌধুরীর বড় ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। দ্বিতীয় ছেলে মাহতাব নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে।

মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী

তাদের ছোট ভাই সরফুদ্দিন চৌধুরী রাজু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আমাদের পরিবারের যে অবস্থান সব সময় ছিল, সে কথা বিবেচনা করেই নেত্রী মাহতাব ভাইকে দায়িত্ব দিয়েছেন।”

প্রয়াত সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাংগঠনিকভাবে সাধারণত সভাপতির অনুপস্থিতিতে প্রথম সহ-সভাপতিই দায়িত্ব পান।

“নেত্রী নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সবার শ্রদ্ধেয় মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীই এখন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।”

আওয়ামী লীগ ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরের জন্য তিন বছর মেয়াদী বর্তমান কমিটি ঘোষণা করে। আগের কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নেতৃত্বে রেখে সাধারণ সম্পাদক করা হয় আ জ ম নাছির উদ্দিনকে।

৭১ সদস্যের এই কমিটির বিভিন্ন পদে মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিতদেরই প্রাধান্য দেখা যায়। নগরীর রাজনীতিতে সেসময় ‘মহিউদ্দিনবিরোধী’ হিসেবে পরিচিত ডা. আফসারুল আমীন এবং নুরুল ইসলাম বিএসসি পান সহ-সভাপতির পদ।

গত ১৫ ডিসেম্বর মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর সন্ধ্যায় দাফন শেষে তার চশমা হিলের বাসায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছিলেন নগর কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

সেই বৈঠকে উপস্থিত মহিউদ্দিনের অনুসারী একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাংগঠনিক নিয়ম অনুসারে সেখানে প্রথম সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী এবং তার অনুপস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে অন্য সহ-সভাপতিরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে প্রস্তাব আসে।

“সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা শুরুতে রাজি ছিলেন না। পরে সাংগঠনিক বিষয় আলোচনা শেষে আমাদের প্রস্তাব তারা মেনে নেন।”

ওই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারেই ১৬ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।

মহিউদ্দিনের অনুসারী ওই নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নগর কমিটির মেয়াদ এক বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। অথচ সবগুলো ওয়ার্ড ও থানা কমিটি এখনো হয়নি।

“এ অবস্থায় ওই কমিটি কনটিনিউ করা আর না করা একই কথা। সামনে নির্বাচন, আশা করি নতুন নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন কমিটি দেওয়া হবে।”

গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানিতে পদদলনে ১০ জন নিহত হওয়ার দিনই বিদেশ সফরে চলে যান নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার সমালোচনা করেন অনেকে। 

মেয়র পদে নির্বাচন, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা, আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণের উদ্যোগ, বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং গৃহকর নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে মহিউদ্দিন ও নাছিরের বিরোধ ছিল চরমে।

এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নতুন নগর কমিটি করার ওপরই জোর দিচ্ছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।